-রোববার থেকে শুরু ১২৬তম জন্মবার্ষিকীর তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান" />
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ জুড়ে রয়েছে কুমিল্লা। নজরুলের রাজনীতি, প্রেম, বিয়ে, ব্যক্তিজীবন, সঙ্গীত ও সাহিত্যের বর্ণিল অধ্যায় ঘিরে এখনও বর্ণময় কুমিল্লা।
কবি কাজী নজরুলের সঙ্গে রয়েছে কুমিল্লার আত্মিক সম্পর্ক। কুমিল্লার সাথে কবির এই আত্মিক সম্পর্কই জাতীয় পর্যায়ে কবির ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের জন্য কুমিল্লাকে নির্বাচিত করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
রোববার (২৫ মে, ১১ জ্যৈষ্ঠ) থেকে কুমিল্লায় জাতীয় পর্যায়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকীর তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে।
মহাবিদ্রোহের অগ্নিগিরি বাঙালির জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান : কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ মে, কুমিল্লায় এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ২৫ মে বিকেল ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
কুমিল্লা জুড়ে কবি নজরুলের বর্ণিল অধ্যায় :
কালজয়ী প্রতিভার অধিকারী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা, গল্প, গান, প্রবন্ধ, উপন্যাস আমাদের বাংলা সাহিত্য, সঙ্গীত, সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ। সাম্য, মানবতা, প্রেম ও বিদ্রোহের কবি নজরুল ১৯২১ সাল থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে মোট পাঁচবার এসেছিলেন কুমিল্লায়। আর অবস্থান করেছিলেন ১১ মাস। এই দীর্ঘ অবস্থান ঘিরে নজরুলের জীবনের মোড় ঘুরার প্রেক্ষাপট এই কুমিল্লাতেই সৃষ্টি হয়েছিল।
কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়র ইন্দ্রকুমার সেনের বাড়ি, ধর্মসাগর পাড়, রাণীর দীঘির পাড়, মহেশাঙ্গন, দারোগাবাড়ি, টাউনহল ময়দান, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ শচীনদেব বর্মনের চর্থার রাজবাড়ি, নবাব বাড়িসহ কুমিল্লার আনাচে-কানাচে এবং কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুরে তাঁর সদর্প পদচারনার অসংখ্য স্মৃতি জেগে আছে।
কবি নজরুলের কুমিল্লায় অবস্থানের পুরো সময়টা ছিল বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময়। কবির জীবনে কুমিল্লার মুরাদনগরের খাঁ বাড়ির নার্গিস আসার খানমের প্রেম এতোটাই গভীর প্রভাব ফেলেছিল যে, কবি নজরুল নার্গিসকে লিখেছিলেন-
‘তোমার উপর আমি কোনো ‘জিঘাংসা’ পোষণ করি না, এ আমি সকল অন্তর দিয়ে বলছি। আমার অন্তর্যামী জানেন তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কি গভীর ক্ষত, কি অসীম বেদনা! কিন্তু সে বেদনার আগুনে আমিই পুড়েছি, তা দিয়ে তোমায় কোনোদিন দগ্ধ করতে চাইনি। তুমি এই আগুনের পরশমানিক না দিলে আমি ‘অগ্নিবীণা’ বাজাতে পারতাম না। আমি ধূমকেতুর বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না।’ প্রেমিকা নার্গিসকে লেখা প্রথম ও শেষ চিঠিতে এভাবেই প্রেমানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন প্রেম ও দ্রোহের কবি নজরুল।
অপরদিকে কুমিল্লা শহরের পশ্চিম কান্দিরপাড়ের আশালতা সেন গুপ্তা ওরফে প্রমীলা নামের এই নারীও এসেছিলেন জীবনসঙ্গিনী হয়ে। নার্গিস ও প্রমীলা কবির জীবনে দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল। এ সময়ে তিনি কুমিল্লায় বসে অজস্র কবিতা ও গান রচনা করেছেন।
১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কুমিল্লা ঈশ্বর পাঠশালায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি ও নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।নজরুলকে কেন্দ্র করে কুমিল্লায় সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ১৯৪৫ সালের মাঝামাঝিতেই শুরু হয়। দেশ বিভাগের পর কুমিল্লায় ব্যাপকভাবে শুরু হয় নজরুল চর্চা।
কুমিল্লায় কবি নজরুলের অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে।এসব স্মৃতি জাগরুক করে রাখার জন্য কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রী শাখায় ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কবি নজরুল ছাত্রাবাস। ১৯৬২ সালে কান্দিরপাড় থেকে ফরিদা বিদ্যায়তন পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হয় নজরুল এভিনিউ। ১৯৭০ সালে কুমিল্লায় নজরুল সাহিত্য চর্চার লক্ষ্যে গঠিত হয় নজরুল ললিতকলা পরিষদ। যা পরবর্তীতে নজরুল পরিষদ নামে রূপান্তরিত হয়। ১৯৮৩ সালে কুমিল্লা শহরের যেসব স্থানে নজরুল বিচরণ ও অবস্থান করেছিলেন সেসব স্থানে টিনের স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। ১৯৯২ সালে ওইসব স্থানে কবি নজরুলের অবস্থান ও ঘটে যাওয়া ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে পাকা স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। ওই বছরে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমীর সামনে নির্মিত হয় শিল্পী উত্তম গুহের তৈরী ‘চেতনায় নজরুল’ স্মৃতিস্তম্ভ। ১৯৯২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নজরুল স্মৃতি স্তম্ভটি উদ্বোধন করেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে গবেষণা ও চর্চার জায়গাটি বেগবান করে তুলতে কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নজরুল ইন্সটিটিউট কেন্দ্র। কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নার্গিস-নজরুল বিদ্যানিকেতন।
জাতীয় কবি নজরুলের সামগ্রিক জীবনের অস্তিত্ব নি:সন্দেহে কুমিল্লা কেন্দ্রিক। নজরুল কুমিল্লার, কুমিল্লা নজরুলের। এই বোধ ও বিশ্বাসের জায়গাটি অনেক সমৃদ্ধ হয়ে ওঠেছে নজরুল প্রেমিদের সাহিত্য চর্চা ও বিভিন্নভাবে কবি নজরুলের অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যদিয়ে। কুমিল্লায় রোববার (১১ জ্যৈষ্ঠ, ২৫মে) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকীর জাতীয় পর্যায়ে তিনদিনের অনুষ্ঠানমালার পর্দা উঠবে।
# সাদিক মামুন /প্রতিসময় /২৪/৫/২৫
Last Updated on May 24, 2025 11:27 am by প্রতি সময়