কুমিল্লা শহর ও শহরতলীতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুইবারের আগমননের মধ্যদিয়ে বেশকিছু স্মৃতি কুমিল্লাবাসীকে এখনও পুলকিত করে।
এখানকার নতুন প্রজন্মকে আগামীদিনে রবীন্দ্রচর্চা আর কবির প্রতি পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার জায়গাটি আরো সাবলীল করে তুলবে, যদি কুমিল্লায় কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণ করা যায়।
শান্তি নিকেতন কবির জন্মদিন, মহাপ্রয়ান দিবস, পৌষমেলা, বসন্ত উৎসব মিলিয়ে সাত বার গিয়েছি, তারপরও কলকাতা গেলেই মনটা উড়ু উড়ু করে হাওড়া যেয়ে শান্তি নিকেতন এক্সপ্রেস ধরার জন্য।
কুষ্টিয়া কুঠিবাড়ি, শাজাদপুর কছারি বাড়ি, পতিসর, দক্ষিণডিহি কবির শ্বশুড়বাড়ি, দার্জিলিং, শিলং কবির ফেলে যাওয়া পাদুকার ছাপ অনুস্মরণ করে পরিব্রাজকের মতো ঘুরেছি। কবির জন্মভিটা জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির বাইরের ফুটপাথের চা দোকানদারদের অনেকের বাংলাদেশি দাদাও বনে গেছি। একবার “স্মৃতি টুকু থাক” মনেকরে ঠাকুর বাড়ির গেইটের বাইরে পিঁড়িতে বসে মুখের খৌরকর্ম (সেভ) করেছি। এ হলো আমার রবীন্দ্র নস্টালজিয়া।
কবিগুরু দুবার এসেছিলেন আমাদের কুমিল্লায়, প্রথমবার ১৯০৫ সালে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে, সেবার তিনি কুমিল্লা টাউন হলে বক্তব্য রাখেন এবং একরাত ধর্মসাগর পাড় রাণীর কুঠিরে অবস্থান করেন।
দ্বিতীয় বার এসেছিলেন ১৯২৬ সালে কুমিল্লা অভয় আশ্রমের ত্রি বার্ষিক সম্মেলনে। ছিলেন অভয় আশ্রমের সেবা সদনে (বর্তমান কেটিসিসিএ লি:। সেবার তিনি মোট ৬৬ ঘন্টা কুমিল্লায় অবস্থান করেন এবং আমন্ত্রিত হয়ে বিভিন্ন যায়গায় যান। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঈশ্বর পাঠশালা। রামমালা হোস্টেলের ছাত্রদের এবং কুমিল্লা মহিলা সমিতির সদস্যদের সাথে অনেকটা সময় কাটানো। তারা তাঁকে মানপত্র দেন যাতে কিছু পংত্তি ছিল এ রকম….
“বাংলার রবী জগতের কবি
ত্রিপুরার দ্বারে এসেছো আজ
বরণ করিগো চরন ধরিয়া
বাংলা মায়ের যশের তাজ”
আমি যখন ৯৪ সালে প্রথম শান্তি নিকেতন যাই সেবারই জানি কুমিল্লায় কবিগুরুর অবস্থানের স্থান গুলোর কথা। আগেই জানতাম কবি কুমিল্লায় এসেছিলেন।
কুমিল্লা এসে আমি যোগাযোগ করি “অলক্ত সাহিত্য পত্রিকা” সম্পাদক তিতাস চৌধুরীর সাথে, তিনি আমাকে “ঢাকা প্রকাশ” নামে তৎকালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় কবিগুরু কুমিল্লায় কোথায়, কোথায় ছিলেন তার রিপোর্ট দেখান।
আমি তখন আমার সংগঠন “সংলাপ কুমিল্লা” পক্ষথকে শহরে কবির স্মৃতি বিজড়িত ৭ টি যায়গায় ঢাকা প্রকাশের ক্যাপসান দিয়ে টিনের ফলক দিয়ে চিহ্নিত করি। কেটিসিসিএ লি: এর স্থানে কবির জন্মদিন ও মৃত্যু দিবসকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান করা শুরুকরি, অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক, সুধিজন অনেকেই গিয়েছেন, বিশিষ্ঠ বুদ্ধিজীবী প্রয়াত শান্তনু কায়সার, জাপান প্রবাসী রবীন্দ্র গবেষক প্রবীর বিকাশ সরকারও একটি অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আর শহর কেন্দ্রীক মানষিকতায় এতদূর যেতে অনেকে অনিহা প্রকাশ করতেন।
কবি যে সেবা সদনে অবস্থান করেছিলেন সেটিকে সংস্কার করার জন্য অধ্যাপক কাজী আবুল বাশার যখন কেটিসিসিএ লি: এর চেয়ারম্যান ছিলেন অনেক দেন দরবার করেছিলাম, এমনকি ভারতীয় হাই কমিশনার ঢাকা পযর্ন্ত গিয়েছিলাম তারাও রাজি ছিল সংস্কার করার।
গত ২০১৯ সালে আমি কুমিল্লায় “ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের অনুষ্ঠান করা কালীন ভারতীয় সহকারি দূতাবাস চট্টগ্রাম এর সহকারি হাই কমিশনার অনিদ্য ব্যানার্জির সাথে আবার কথা বলি, তিনি এ ব্যাপারে খোঁজ নেবেন বলে জানিয়ে ছিলেন কিন্তু করোনা আসার কারণে বিষয়টি আর এগোয় নি।
এখনও সময় আছে কুমিল্লায় কবিগুরুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবস্থানের স্থানগুলো চিহ্নিত করে সম্ভব হলে সেবা সদনটিকে মেরামত করে কবির স্মৃতি ধরে রাখার।
Last Updated on May 8, 2024 9:01 am by প্রতি সময়