কুমিল্লা শহরতলীর দুর্গাপুর দিঘিরপাড় এলাকায় মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে মনির হোসেন (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে দুই দফা নির্যাতন চালিয়ে হত্যার পর বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফন করার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহার নামীয় ৬ আসামিকে গ্রেফতার করেছে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ।
সোমবার দিবাগত গভীর রাতে সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।গ্রেফতারকৃত আসামীরা একই পরিবারের। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন, সদর উপজেলার ঘোড়ামারা কৃষ্ণনগর গ্রামের আমির আলী এবং তার ৫ পুত্র এরশাদ, তৌহিদ,আজাদ, রাশেদ ও জাহিদ। মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফারুক আহাম্মদ।
এদিকে মামলা দায়েরের ২৪ ঘন্টার মধ্যে এজহার নামীয় ৮ আসামীর মধ্যে ৬ আসামী গ্রেফতার হওয়ায় সন্তেুাষ প্রকাশ করেছেন নিহত মনিরের স্বজনরা। তারা বলেন,পুলিশ প্রশাসন বর্বরোচিত হত্যাকান্ডকে গুরুত্ব দিয়ে অল্প সময়ে আসামীদের গ্রেফতার করেছে এতে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা ন্যায় বিচার চাই,খুনিদের ফাঁসি চাই।
এছাড়া মনির এলাকায় শান্ত-শিষ্ঠ শান্তিপ্রিয় লোক হিসেবে পরিচিত ছিল। তাকে বর্বরোচিতভাবে দফায় দফায় রড,লাঠি,বেলচা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে ফিল্মি কায়দায় নানা অপকৌশলে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করার ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে নিন্দার ঝড় উঠে। তবে মামলা দায়েরের পরদিনই ঘটনার মুল হোতা তৌহিদ,এরশাদ সহ ৬ খুনি গ্রেফতারে এলাকাবাসী পুলিশ প্রশাসনের প্রশংসা করেছেন। তারা আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মিথ্যা মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে মনির হোসেনকে ১১ মে সন্ধ্যা এলাকায় মারধর করার পর পূনরায় ১৩ মে সকালে মামলায় অভিযুক্তরা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে মারধর করে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে কোতয়ালী মডেল থানায় চোর হিসেবে সোপর্দ করার চেষ্টা চালায়। পুলিশ হাসপাতালে নিতে যাওয়ার কথা বললে নির্যাতনকারীরা তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় জরুরী বিভাগের রেজিষ্টারে দূর্ঘটনার আহত উল্লেখ করে মনিরের পরিচয় অজ্ঞাত হিসেবে লেখা হয়। রাতে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ১৪ মে হাসপাতাল থেকে কোতয়ালী মডেল থানায় খবর দেয়ার পর পুলিশ ময়নাতদন্তের পর মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের জন্য মরদেহ আঞ্জুমানে হস্তান্তর করে। ১৫ মে নগরীর টিক্কাচর কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে তার দাফন সম্পন্ন হয়। ঘটনার ৪ দিন পর রোববার (১৬ মে) স্বজনরা তার খোঁজে থানায় গিয়ে জানতে পারেন মনির নিহত হয়েছে। নানা নাটকীয়তা শেষে এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সালমা বেগম বাদী হয়ে এরশাদ ও তৌহিদসহ ৫ ভাই ও পিতা আমির আলী সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মঙ্গলবার (১৮ মে) বিকেলে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আনোয়ারুল হক বলেন, মামলা দায়ের করার পর অভিযান চালিয়ে এরই মধ্যে এজাহারনামীয় ৮ জনের মধ্যে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আাসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলেও ওসি জানিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাঁড়ির এসআই ফারুক আহম্মেদ জানান, সোমবার রাতভর সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এজহার নামীয় ৬ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতের মাধ্যেমে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। ঘটনায় এজহার নামীয় আসামীর বাহিরে কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত চলছে।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম