সন্তান তার আবদার, চাওয়া-পাওয়া, ভালো লাগা, মন্দ লাগা ভাগাভাগি করে নেয় মায়ের সঙ্গে। আর মায়ের পরম মমতায় সন্তান যেনো সব খুঁজে পায়। ‘মা’ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম শব্দ। যে শব্দের বিশেষন অনেক। কিন্তু বিভাজন নেই। অথচ যুগ যুগ ধরে আচরণগত কারণে পিতার পরবর্তী বিয়ের সেই নারী মা থেকে বনে যান সৎমা! কিন্তু এ সন্তানরা ওই নারীকে সৎমা ডাকে না, ডাকে মা। অথচ গর্ভে ধারণ না করলেও সেই সন্তানের প্রতি বিরাগভাজন কেন ? এ প্রশ্নের জবাব সিনেমা, নাটক, উপন্যাসেও মেলেনি। কারণ এর জবাব সৎমায়েরই জানা আছে। কেনো তিনি মৃত বা জীবিত সতীনের সন্তানের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করেন।
আজকে এমন এক সৎমায়ের কথা বলছি- যিনি মানুষ গড়ার কারিগর। যার হাতেঘড়ি শিক্ষায় অগণিত শিশু আগামীদিনে প্রকৃত মানুষ হবে। কিন্তু এই সৎমা মানুষ মারার কারিগর। যার নিষ্ঠুরতায় ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে মৃত সতীনের এক নিষ্পাপ শিশুকন্যা।
সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে চাকুরী থেকে অবসরে যাওয়ার পর ২০১০ সালে কুমিল্লার চান্দিনা পৌর এলাকার রূপনগর আবাসিক এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জামাল হোসেন। ২০১৪ সালে তার স্ত্রী মারা যান। এরপর জামাল হোসেন দ্বিতীয় বিয়ে করেন দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের প্রেমু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক লাভলী আক্তারকে। এ বাড়িতেই দ্বিতীয় স্ত্রী ও মৃত প্রথম স্ত্রীর সন্তান নিয়ে বসবাস করেছেন জামাল হোসেন। তার নিজের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতায় গ্রামে।
জামাল হোসেনের শিশু কন্যা ইসরাত জাহান তিথি ওরফে মনি চান্দিনা সংলগ্ন দেবিদ্বার উপজেলার বাগমারা আলিয়া মাদরাসায় লেখাপড়া করতো। ২০১৮ সালে তিথি অসুস্থ হয়ে পড়লে আর তাকে মাদরাসায় পাঠানো হয়নি। এদিকে এবছরের ফেব্রæয়ারী মাসে একটি অস্ত্র মামলায় তিথির বাবা জামালকে নারায়নগঞ্জ পুলিশ গ্রেফতার করলে তিথির কপালে নেমে আসে দুর্ভোগ। তিথির ওপর শুরু হয় স্কুল শিক্ষিকা সৎমা লাভলীর অত্যাচার ও অমানুসিক নির্যাতন।
ময়নামতি সেনানিবাস সংলগ্ন ঘোষনগর গ্রামের সামসুল হক ভূইয়া তিথির খালু। গত ২ অক্টোবর তিনি তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেবিদ্বার উপজেলার ভানী ইউনিয়নের কটকসার গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াতে এসেছিলেন। দাওয়াত শেষে তিনি তিথিকে দেখতে রূপনগর আবাসিক এলাকার বাড়িতে যান। এসময় জামাল হোসেনের স্ত্রী লাভলী জানান তিথি অসুস্থ। এরপর তিনি তিথিকে তার সঙ্গে ময়নামতি ঘোষনগরের বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরদিন অসুস্থ তিথিকে তার খালাতো বোন গোসল করিয়ে পোষাক পরানোর সময় তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়।
জানা যায়, সৎমা লাভলীর নির্যাতনে তিথির এঅবস্থা হয়েছে। সৎমায়ের নিষ্ঠুরতায় শিশু তিথির ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ার অভিযোগও ওঠেছে। সৎমায়ের নির্যাতনের শিকার তিথি গত ১০ দিন সামসুল হক ভূইয়ার বাড়িতে থাকার পর মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) চান্দিনা উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের হেফাজতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামসুদ্দিন মো. ইলিয়াস জানান, শিশুটির বিষয়ে চান্দিনা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে জানানো হলে শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে তারাই শিশুটির দেখভালো করছেন। নির্যাতিত শিশু তিথির খালু সামসুল হক ভূইয়া বাদী হয়ে স্কুল শিক্ষিকা লাভলীর বিরুদ্ধে চান্দিনা থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতারের ষ্টো চালাচ্ছে।
#দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে protisomoy ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে এবং ভিডিও খবর দেখতে protisomoy news ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করে অ্যাকটিভ থাকুন।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম