কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজলার বিজয়পুরের মৃৎশিল্প।এই জনপদে কয়েক দশক ধরে তৈরী হচ্ছে মাটির তৈরী নানা নান্দনিক জিনিসপত্র। শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় মাটির তৈরী এসব জিনিস পত্র দেশের সীমানা পেরিয়ে চলে যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু ইদানিং গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
সমবায় আন্দোলনের পথিকৃৎ আখতার হামিদ খানের মাধ্যমে বিজয়পুরের এই মৃৎশিল্প কেন্দ্রটি ১৫ জন সদস্য নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় ১৯৬১ সালে। সমিতির সদস্যরাই এখানে মৃৎ শিল্পের উৎপাদনে জড়িত।
সূত্র জানায়, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নের বিজয়পুর এলাকায় ৭টি গ্রাম নিয়ে ঘরে উঠেছে এই মৃৎশিল্প নগরী।
এসব কুমার সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে মাটির কাজ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্তমানে ৬০ জন সদস্য এই শিল্পের উৎপাদনে সাথে জড়িত। এখানে বিদেশী রপ্তানিযোগ্য টেরাকোটা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মডেল, বিভিন্ন প্রকারের টবসহ নানান সামগ্রী তৈরি করা হয়। প্রথমে উৎকৃষ্ট মানের মাটি সংগ্রহ করে নরম করে ছাঁচে ঢেলে একটি পছন্দসই আকার দেওয়া হয়। সর্বশেষ আগুনে পুড়িয়ে তৈরী করা হয় কাঙ্খিত শিল্পকর্ম। এখানে উৎপাদিত পন্যের মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন ক্রেতারাও।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা ক্রেতা আব্দুস সালাম নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, আমি শখ করে একটি বাড়ি তৈরি করেছি, আমার ইচ্ছে হয়েছে বাড়িটিকে সুন্দর ভাবে সাজাবো, তাই দেশীয় যে শিল্প রয়েছে মাটির তৈরি হস্ত শিল্প সেগুলো দিয়ে বাড়িটি সাজাবো বলে মনোস্থির করি। তাই খবর নিয়ে চলে আসি বিজয়পুরের এই মৃৎশিল্প কারখানায়।মৃৎশিল্পের যে জিনিস গুলোতে সৌন্দর্য গড়ে তুলতে পারে এরজন্য কিছু মডেল তাদের কাছে আমি দেই, তারা আমাকে সেগুলো খুব সুন্দর করে তৈরি করে দিয়েছে। তা আমার খুব পছন্দ হয়েছে, এগুলোতে আমার বাড়ির সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলবে বলে আমি মনে করি।
স্থানীয় আশিষ পাল নামে এক ব্যাক্তি জানান, বিজয়পুরের এই মৃৎশিল্প নগরীতে মাটির তৈরি নানান রকম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি হয়, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোক জন এসে মাটির তৈরি এসব জিনিস পত্র নিয়ে যায়।
বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি তাপস কুমার পাল বলেন, বিজয়পুর এলাকার ৭টি গ্রামের রুদ্রপাল কুমার সম্প্রদায়ের লোকজন মাটির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমরা এখানে সকল সদস্যদের আমানত পাই এবং সেয়ার বিক্রি করি, সেই সঞ্চিত টাকা দিয়ে আমরা মূলধন গঠন করি, এই টাকা আমরা বিনিয়োগ করে মৃৎশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমরা ব্যাংক থেকে লোন পাই না, যদির এভাবে অর্থের একটা যোগান হত তবে মৃৎশিল্পকে এগিয়ে নিতে সহজ হত।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাসের সংকটের কারণে উৎপাদন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
Last Updated on January 8, 2023 5:31 pm by প্রতি সময়