অপহরণের ৩৮দিন পর পাঁচ বছরের শিশু আবদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।মুক্তিপণের আগেই শিশু রহমানকে হত্যা করে লাশ গুম করে রাখে অপহরণকারিরা।পরে মুক্তিপণের নাটক সাজিয়ে টাকা আদায় করতে গিয়ে ছদ্মবেশি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে তিন অপহরণকারি।
ঘটনাটি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার গাংগাটিয়া গ্রামে ঘটেছে।ওই গ্রামের ফারুক মিয়ার ছেলে শিশু রহমানের আপন ফুফা মুরাদনগর উপজেলার বোড়ারচর গ্রামের আবু মুসার ছেলে নাজমুল হাসান (৩০) ছিলেন অপহরণের ঘটনার মূল হোতা।
সোমবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে মুরাদনগরের বাখরাবাদ এলাকা থেকে মুক্তিপণের টাকা নিতে আসা অপহরণকারি দলের একজন একই গ্রামের আবদুল বাতেন বেপারীর ছেলে মো. ময়নাল (৩৪) এবং একই রাতে মুল হোতা শিশুটির ফুফা নাজমুল ও একই গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে রবিউল হাসানকে আটক করে মুরাদনগর থানা পুলিশ।
পরে সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে অপহরণের ঘটনার মূল হোতা নাজমুলের দেয়া তথ্যে মুরাদনগর উপজেলার বোড়ারচর এলাকা থেকে মাটি খুঁড়ে শিশু আবদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে বাখরাবাদ এলাকায় ছদ্মবেশে অপহরণকারিদের ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন দুই পুলিশ সদস্য।
পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে নিজ ঘর থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় অপহরণ হয় শিশু আবদুর রহমান। এ সময় শিশু আবদুর রহমানের বাবা ফারুক হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যায় অপহরণকারীরা।এ ঘটনার পরদিন শিশুটির বাবা ফারুক মিয়া মুরাদনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
অপহরণের বেশ কিছুদিন পর ফারুকের ওই মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রীর নাম্বারে ফোন করে ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে পঞ্চাশ লাখ টাকা দাবি করেন অপহরণকারিরা। বিষয়টি মুরাদনগর থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ অপহরণকারি চক্রকে ধরতে কৌশল অবলম্বন করে। আর সেই সোমবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এস আই হামিদুল ইসলামসহ সঙ্গীয় ফোর্স ছদ্মবেশে মুক্তিপণের টাকা দিতে বাখরাবাদ এলাকায় অপহরণকারিদের দেয়া ঠিকানায় যান। পরে সেখান থেকে মুক্তিপণের সর্বশেষ দাবিকৃত চার লাখ টাকা নিতে আসে অপহরণকারি চক্রের সদস্য ময়নাল। টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় এসআই হামিদুল ইসলাম ময়নালকে ধরে ফেললে অপহরণকারি চক্রের অন্য সদস্য লাঠি দিয়ে হামিদুল ইসলামের ডান পায়ে আঘাত করলে তিনি পড়ে যান। তারপরেও তাকে না ছাড়লে ময়নাল এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্য হামিদের গালে কামড় দেয়। হামিদের চিৎকার শুনে কিছুটা দুরে থাকা ছদ্মবেশধারী পুলিশ সদস্য রুবেল এসে ময়নালকে আটকে রাখার চেষ্টা করে।
এ সময় ময়নাল তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে পুলিশ সদস্য হামিদ ও রুবেলকে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে এসআই হামিদের সাথে থাকা বন্দুক দিয়ে ময়নালের পায়ে গুলি করেন। গুলির শব্দ শুনে আরো কিছুটা দুরে থাকা মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান ঘটনা স্থলে গিয়ে আহত দুই পুলিশ সদস্য ও অপহরণ কারি চক্রের সদস্য ময়নালকে মুরাদনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পরে ময়নালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সোমবার দিবাগত রাতেই অপহরণের পর হত্যার সাথে জড়িত নাজমুল হাসান ও রবিউল হাসানকে গ্রেফতার করা হয়।
ওই রাত ২টার দিকে অপহৃত শিশু রহমানের আপন ফুফা নাজমুলের দেয়া তথ্যে মুরাদনগর উপজেলার বোড়ারচর এলাকা থেকে মাটি খুঁড়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।অপহরণকারিরা মুক্তিপণের টাকার আগেই শিশুটিকে হত্যার পর গুম করে রাখে।
মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান বলেন, শিশু আবদুর রহমান অপহরণের ঘটনায় ময়নাল, নাজমুল হাসান ও রবিউল হাসান নামের তিন অপহরণকারীকে আটক করেছি এবং তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ও স্বীকারোক্তিতে শিশু আবদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করেছি।অন্যান্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম