ছবি: সংগৃহিত।।
লোকমুখে লতি নামেই প্রচলিত সবজিটির প্রকৃত নাম লতিরাজ। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক ফলন হওয়া লতিরাজ বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে বিদেশে রপ্তানি হতে পারছেনা।
কৃষক ও লতি ব্যবসায়িদের ভাষায় এবারের মৌসুমে করোনার থাবায় আক্রান্ত কুমিল্লার কচুরলতি। তবে স্থানীয় বাজারে বিক্রিতে বেশ সাড়া মিলছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে কুমিল্লা নগরী থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে বরুড়া উপজেলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ গ্রামে গত বছরের তুলনায় এবারে বেড়ে ৫৫০ হেক্টর জমিতে লতি চাষ হয়েছে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লতিরাজ নামের এ সবজি চাষ হয়ে থাকে।
প্রতিমাসে দুইবার ক্ষেত থেকে লতি কাটা হয়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় এবারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ভূমিকা রাখতে পারছে না কুমিল্লায় উৎপাদিত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর সবজি লতিরাজ। দেশজুড়ে লতি চাষের জন্য অনেক আগ থেকেই নামডাক রয়েছে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার। এখানকার উৎপাদিত লতি দেশের অধিকাংশ জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের মাটিতেও জনপ্রিয় সবজির জায়গাটি দখল করে রেখেছে।
বরুড়া উপজেলার সহস্রাধিক পরিবার লতি চাষের সাথে জড়িত। বছরের ৬মাস ধরে ব্যাপকহারে উৎপন্ন হয়ে থাকে লতি। প্রতিমাসে দুইবার করে বিপুল পরিমান লতি ক্ষেত থেকে তুলে কাদবা নামে স্থানীয় একটি বাজারে তোলা হয়। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার কাদবা বাজারে লতি নিয়ে জড়ো হোন চাষীরা। ক্রেতাদের মুখে এটি লতির হাট নামেই প্রচার পেয়েছে।
কাদবা বাজার ছাড়াও বরুড়ার উপজেলার শরাফতি পদুয়ার বাজার, বাতাইছড়ি পুরান বাজার, নতুন বাজার, পদুয়া, জালগাঁও, মন্তুর বাজার, শিকারপুর, দরগারনামা, ভবানীপুর, মুগুজি, নিচিন্তপুর, বরাইপুর, যশপুর, পোনতলা, পাঠানপাড়া, ঝাঁলগাঁও, খোশবাস, সদর দক্ষিণ উপজেলার বাগমারা, ভুশ্চি, লালমাই, সদর উপজেলার কমলাপুর, কালিরবাজার, হাতিগড়া, জাঙ্গালিয়া, কৃষ্ণপুর, চান্দিনার মাইজখার, ছায়াকোট, রামমোহন, পিহোর এবং বুড়িচংয়ের নিমসার সবজি বরুড়ার লতি স্থান পেয়ে থাকে।
উল্লেখিত বাজার থেকে পাইকারি ব্যবসায়িদের হাত ধরে কুমিল্লার লতি যাচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামের আড়তে। আবার ঢাকা, চট্টগ্রামের ব্যবসায়িরা বিশেষ ব্যবস্থায় প্যাকেটজাত লতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছেন।
কিন্তু এবারে করোনা হানায় এপ্রিল থেকে এসময় পর্যন্ত বিশ্ববাজারে পৌঁছতে পারেনি কুমিল্লার লতি। পাইকারি ব্যবসায়ি আবুল কাশেম ও দোলন মিয়া জানান, তারা কাদবা ও বাতাইছড়ি বাজার থেকে লতি কিনে ঢাকা চট্টগ্রামের আড়তে বিক্রি করেন। সেখান থেকে আবার আরেক পার্টি কিনে নেয় বিদেশ পাঠানোর জন্য। এবারে করোনার কারণে বিদেশ পাঠানো পার্টিদের দেখা মেলেনি।
তারা জানান, পরিবহন খরচ বেশি দিয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম লতি নিচ্ছি। লোকসান নেই। লাভ ভালই হচ্ছে। বরুড়ার বাতাইছড়ি গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম, সামসু মিয়া, ফোরকান আলী, মোবারক মিয়া, মহিউদ্দিন মিয়া জানান, লতি চাষ করে জীবন সার্থক। গত ২৫/৩০ বছরেও লোকসান হয়নি। বরুড়ার হাজার পরিবার লতি চাষ করে সাবলম্বী।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুরজিত চন্দ্র দত্ত জানান, ‘বরুড়ার মাটি লতিরাজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। প্রতিমাসে যে পরিমান লতিরাজ আবাদ হচ্ছে তা কুমিল্লা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনি, নোয়াখালি অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাচ্ছে’।
উপ-পরিচালক আরও বলেন, ‘আবার বিশ্বের কয়েকটি দেশে রপ্তানিও হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে রপ্তানি প্রক্রিয়া থেমে থাকলেও বিক্রির পরিমান কমেনি। কম খরচে অধিক লাভ এ সবজির ফলনের প্রতি নতুন করে সেখানকার অনেক পরিবার আগ্রহী হয়ে উঠছে। লতিরাজ চাষীদের সহযোগিতা, পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি কর্মকর্তারা’।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম