এবারের বর্ষায় তুলনামূলক বৃষ্টি কম হলেও আমন আবাদের উপযোগী আবহাওয়া থাকায় এ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে কুমিল্লায়। মাঠ জুড়ে আমনের সোনালী শীষের অপরূপ দৃশ্য মনে দোল দিয়ে যায়। কুমিল্লায় ধান চাষে সোনালী যুগের আগমন ঘটেছে। এবারে আমন উৎপাদনের রেকর্ডই এমনটি জানান দিচ্ছে। আমন উৎপাদনে কুমিল্লায় নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন এখানকার কৃষকরা।আর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া আমনের ফলনে জেলার কৃষি কর্মকর্তারাও বেশ খুশি।

এবারের বর্ষায় বৃষ্টিনির্ভর রোপা আমন চাষে কৃষকরা প্রথমদিকে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কম হওয়ায়। কিন্তু হাল ছাড়েনি কৃষকরা। প্রতিটি উপজেলায় সেচপাম্প চালু হওয়ায় রোপা আমন আবাদে আর বেগ পেতে হয়নি কৃষকদের।মাঠের পর মাঠ জুড়ে ধীরে ধীরে স্বপ্নের সোনালী ধান হাসির ঝিলিক তুলে কৃষকের মুখে।

এবছর কুমিল্লায় আমনের রেকর্ড পরিমান উৎপাদনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে কৃষকদের মাঝে। বৃষ্টিপাত কম হলেও অনুকূল আবহাওয়া, রোগবালাই কম ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে কৃষকদের পরিশ্রমের ফলই আমন উৎপাদনে সেরা অর্জন এনে দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবছর ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে প্রাণের কৃষকরা। কুমিল্লার ১৭ উপজেলার মধ্যে এবছর আমন উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম, সদর দক্ষিণ বরুড়া ও দেবিদ্বার উপজেলা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবছর যে পরিমান আমন উৎপাদন হয়েছে তা কুমিল্লার ৬০ লাখ জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণের পরও উদ্বৃত্ত থাকবে। আমন চাষের আগে কৃষকদের মধ্যে সচেতনা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল। এরমধ্যে সেচপাম্পের বিষয়টিকে বেশ গুরুতব দেয়া হয়েছে। যা পরবর্তীতে আমন উৎপাদনে অন্যতম সহায়ক হয়েছে।

কুমিল্লার আমন চাষীরা জানান, এবারে আমনের বাম্পার ফলনে তারা যতটা খুশি তারচেয়ে বেশি খুশি হবেন যদি সরকারিভাবে ধান ক্রয়ে দর বাড়ানো হয়। চৌদ্দগ্রামের হোসাইন মামুন, বুড়িচংয়ের আওলাদ মিয়া, বরুড়ার সফেদ আলী নাঙ্গলকোটের শুক্কুর মিয়াজীসহ বেশ ক’জন কৃষক জানান,এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর সঠিক দিক নির্দেশনায় আমনের ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে চালে দাম বেড়েছে। এবারে সরকারিভাবেও ধান ক্রয়ে দাম বাড়বে বলে শুনেছেন। তারা আরো জানান, উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধানের দর নির্ধারণ করলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবে। আর ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারিভাবে ধান ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন হলে কৃষকদের সুবিধা হতো। এতে দালাল ও ফড়িয়াদের উৎপাত কমে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমন আবাদে আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা তা শতভাগ পূরণ হয়েছে। কোথাও কোথাও ধান কাটা শুরু হয়েছে।এবার রোপা আমন আবাদে আমাদের বড় ধরনের সংগ্রাম করতে হয়েছে। আর এটা হচ্ছে জমিতে পানি সমস্যা। চারা রোপনের সময়টাতে বৃষ্টি কম হয়েছিল। এতে বৃষ্টি নির্ভর রোপা আমন চাষ করা যাচ্ছিলো না। বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে প্রশাসন, পাম্প মালিক, কৃষক ও কৃষির মাঠ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সেচ যন্ত্র চালুর ব্যবস্থা করেছি। এতে রোপা আমন আবাদে কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। এবারে কৃষকরা সরকারিভাবে ধান বিক্রিতে ভালো দাম পাবেন।