কুমিল্লায় ওয়ার্কশীট নিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। তুলে দিচ্ছেন বাড়ির কাজের শীট যা নির্দিষ্ট সময় পর আবারো শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করে মূল্যায়ন করবেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি পাঠ্য বইয়ের অধ্যায় শেষে বা বইয়ের মধ্যে যে ওয়ার্ক শিট দেয়া আছে, সেগুলো কম্পোজ ও ফটোকপি করে শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠে মনোযোগী করতে মন্ত্র্রনালয়ের সিদ্ধান্তে এ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
অপরদিকে কয়েক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর আবারো মাধ্যমিক স্তরে এসাইনমেন্ট চালু হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহের এসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে ৬ষ্ঠ থেকে নবম শ্রেনির শিক্ষার্থীরা। এসাইমেন্টকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে বসলেও অভিভাবকদের অভিযোগ এসাইনমেন্ট এর উত্তর ইন্টারনেট ও ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে। তারা নিজেরা অনুশীলন করে উত্তর সংগ্রহ না করে ইন্টানেটে পাওয়া এসব উত্তর হুবুহু তুলে দিচেছন।
মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে গত বছরের (২০২০) সালের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ রয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে এসাইনমেন্ট ' নামক নতুন অধ্যায় দিয়ে আবারও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জুড়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি। দেশের সকল সেক্টর খুলে দেয়া হলেও ১৫ মাস ধরে বন্ধ রাখা হয়েছিল শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত বছরের শেষে শিক্ষার্থীদের মুল্যায়নের জন্য দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণি -নবম শ্রেণি পর্যন্ত কয়েক ধাপে "এসাইনমেন্টের" কাজ শুরু হয়েছে।তবে গ্রামের মানুষ "এসাইনমেন্ট " নামক শব্দের সাথে পরিচিত নয়। বাড়িতে স্কুলে যাওয়া উপযুক্ত ছেলে-মেয়ে আছে, এমন মানুষেরা এরই মধ্যে বেশ পরিচিত হয়ে গেছেন অ্যাসাইনমেন্ট শব্দটির সাথে। গুগলেও বেশ সার্চ করা হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্ট সম্পর্কিত নানা বিষয় নিয়ে। জুম, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ক্লাস, গুগুল ক্লাসরুমে অ্যাসাইনমেন্ট, যাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সামর্থ্য নেই তারা শিক্ষকদের সাথে ফোনকল করছেন। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত এই পদ্ধতি ব্যবহার করার হচ্ছে।
চলতি বছরের শুরুতে আবারো এসাইনমেন্ট চালু করলেও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা মার্চ মাসে স্থগিত করা হয়। চলতি মে মাসের আবারো চালু করা হয় স্থগিত হওয়া এসাইনমেন্ট। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা স্থগিত হওয়া তৃতীয় সপ্তাহের এসাইমেন্ট ও নতুন করে দেওয়া চতুর্থ সপ্তাহের এসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
নগরীর নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী আদিবা তাহসিন মিস্পা বলেন, আমরা এই এসাইনমেন্ট পদ্ধতি পেয়ে খুব খুিশ। একঘিয়েমি কেটে আমরা আবার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি খুব মজা লাগছে।
এ বিষয়ে বুড়িচং শংকুচাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান আখন্দ বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে তিনটি করে 'অ্যাসাইনমেন্ট' দেয়া হচ্ছে ।সপ্তাহের শুরুতে একদিন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বা পরিবারের অন্য কোন প্রতিনিধি স্কুলে গিয়ে সেই অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করে নিদিষ্ট তারিখে জমা দিয়ে থাকেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে শিক্ষার্থী অভিভাবকরা অনিশ্চিয়তায় রয়েছে এরই মধ্যে আবারো এসাইমেন্ট চালু হওয়ায় তারা অনেকটা স্বস্থি পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে ফিরেছে। আমার বিদ্যালয়ের প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী এসাইমেন্ট এ অংশ নিচ্ছে। তবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর উত্তর ইন্টারনেট, ইউটিউব, ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা।
কুমিল্লা জিলা স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসিন এর অভিভাবক নাসরিন আক্তার জানান, এসাইমেন্ট এর মাধ্যমে যথার্থ মূল্যায়ন হচ্ছেনা। প্রায় ১৫ মাস বিদ্যালয় বন্ধ। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা দূরের কথা মানসিক সমস্যায় ভূগছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু চলছে ,স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হউক। সীমিত পরিসরে সপ্তাহে একদিন ক্লাস নিলেও কিছুটা হলেও রক্ষা হবে।
ওয়ার্কশীট নিয়ে শিক্ষার্থীদের দরজায় প্রাথমিক শিক্ষকরা :
দেশের করোনা সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রাথমিকের নতুন পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী সপ্তাহে একদিন শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে পড়াতে হতে পারে বলে আলোচনা হলেও তা বাতিল করা হয়। তবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষকদের প্রতি সপ্তাহে একদিন করে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের কাছে ‘ওয়ার্ক শিট’ দিয়ে আসতে হবে। দিয়ে আসার পর পরবর্তীতে পরের সপ্তাহে তা জমা নিয়ে পুনরায় “নতুন ওয়ার্ক শিট” দিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি পাঠ্য বইয়ের অধ্যায় শেষে বা বইয়ের মধ্যে যে ওয়ার্ক শিট দেয়া আছে, সেগুলো ফটোকপি করে অভিভাবকদেরকে দেয়া হবে বলে জানা গেছে।দেশের প্রাথমিক ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে কার্যত বন্ধ আছে। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যহত না হয় সেজন্য শিক্ষরা অনলাইনে পাঠ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। নেপ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর যাতে শিক্ষার্থীদের পাঠ কার্যক্রম ব্যাহত না হয় তার জন্য নানামুখী উদ্যোগের একটি নতুন উদ্যোগ গ্রহন করতে চলেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। এটি প্রস্তাবনা থেকে সিদ্ধান্তের আলোকে শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে এই ওয়ার্কশীট বিতরণ শুরু করেছেন। ঝরে পড়া রোধ এবং পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা সদরের কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য ডা. সমর চন্দ্র রায় বলেন, এ রকম একটি উদ্দেগ গ্রহন করার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদেও ছেলে মেয়েরা বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বই খুলে দেখত না। ওয়ার্কশীট দেয়ার হতে তারা বই নিয়ে এখন পড়ার টেবিলে বসেছে। আগের মত আর অলস অলস সময় কাটায় না।
শহরতলীর কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ হাসিনা আক্তার জানান, আমাদের শিক্ষকরা ওয়ার্কশীট নিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পোঁছে দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে শিক্ষকরা দীর্ঘ সময় পর শিক্ষার্থী- অভিভাবকের সাথে সরাসরি কুশল বিনিময়ে পাশাপাশি পড়াশুনার বিষয়ে গাইড লাইনও দিচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থী অভিভাবকরা খুবেই খুশি।
কুমিল্লা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, কুমিল্লা সদরের প্রত্যেক বিদ্যালয়ে পৌঁছে গেছে ওয়ার্কশীট। এতে করে শিক্ষার্থী- অভিভাবকদের মাঝে বেশ ইতিবাচক সাড়া পড়েছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আশা করি এতে উদ্যেগ ফলপ্রসু হবে। স্কুল খুললেও যেন এ উদ্যেগ যেন অব্যাহত রাখা হয় এ বিষয়ে অভিভাবকরা মতামত দিচ্ছেন।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম