কুমিল্লায় দেশের চতুর্থ বৃহত্তম রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগ ও রফতানি। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শহর কুমিল্লার দক্ষিণ চর্থার পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত ‘কুমিল্লা ইপিজেড’ প্রতিষ্ঠার দুই যুগে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রফতানিতে রেকর্ড গড়েছে। বিশেষ করে চলতি (২০২৪-২০২৫) অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পণ্য রফতানিতে যে রেকর্ড গড়েছে এধারা অব্যাহত থাকলে দেশের অন্য ইপিজেড থেকে এটি সবচেয়ে সমৃদ্ধ ইপিজেড হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিল্পবান্ধব কর্মপরিবেশের জন্য বিনিয়োগকারিদের পছন্দের জায়গাটি দখল করে আছে কুমিল্লা ইপিজেড। ফলে প্রশস্ত হয়েছে ব্যাপক কর্মসংস্থানের পথ।
কুমিল্লা ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুন থেকে জানুয়ারি এই সাত মাসে কুমিল্লা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ৬১৬ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। বিগত বছরের তুলনায় মাত্র সাত মাসে এতোবড় রফতানি আর হয়নি। কুমিল্লা ইপিজেডের দুই যুগের ইতিহাসে এটি একটি নতুন সাফল্য। তবে ইপিজে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী, চলতি অর্থবছরের বাকি যে পাঁচ মাস রয়েছে সবমিলিয়ে রফতানির পরিমাণ এক হাজার মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। উৎপাদন সক্ষমতা, পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন এবং আধুনিকতার মধ্যদিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা ইপিজেড।
চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে রেকর্ড পরিমাণ রফতানি প্রসঙ্গে কুমিল্লা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘কুমিল্লা ইপিজেডে প্রতিনিয়ত কোটি ডলারের পণ্য রফতানির বিষয় থাকে। অনেক সময় অনেক রকমের পরিস্থিতিতে রফতানি ধমকে যায়, যেমন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। যা এখনও চলছে। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় কুমিল্লা ইপিজেডে রফতানি বেড়েছে। রফতানির খাত না বাড়লেও যেসব দেশ এখান থেকে পণ্য নিতেন তারা পণ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ায় রফতানি বেড়েছে। দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে কুমিল্লা ইপিজেড। আবার এই ইপিজেড ঘিরে কুমিল্লার অর্থনীতিতেও গতিশীলতা এসেছে।
কুমিল্লা ইপিজেডে বর্তমানে ৪৯টি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে, রেডিমেড গার্মেন্টস, জ্যাকেট, টেক্সটাইল, কিচেন ইউটেনশিলস, ইলেকট্রনিক্স, ব্রাশ, মেডেল, ফুটওয়্যার ও লেদার গুডস, সেফটি সুজ ও সু অ্যাক্সেসরিজ, ক্যামেরার কেইস, ব্যাগ, লাগেজ, প্লাস্টিক পণ্য, হেয়ার ও ফ্যাশন অ্যাক্সেসরিজ, মেডিসিন বক্স, আইপ্যাচ, কার্পেট, গ্লাভস, পেপার প্রোডাক্টসহ বিভিন্ন রকমের পণ্যসামগ্রী। এছাড়াও পণ্য উৎপাদনে আরও চারটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে।
কুমিল্লা ইপিজেডে উৎপাদিত পণ্যের অন্তত ৯৫ শতাংশ রফতানি হয় জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানী, ফ্রান্স, ইতালি, সুইডেন, স্পেন, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, গ্রীস, পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, লুক্সেমবার্গ, হাঙ্গেরিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
এদিকে রাজধানী ঢাকা ও বন্দর রাজধানী চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা ইপিজেডের অবস্থান কাছে হওয়ায়ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং উন্নত পরিবেশের কারণেই বিদেশি বিনিয়োগ দিনদিন বাড়ছে।এখানে বিদেশি বিনিয়োগে ২৭টি, দেশি-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগে ১৩টি এবং শুধু দেশিয় বিনিয়োগে চলছে ৮টি প্রতিষ্ঠান।কুমিল্লা ইপিজেডে বিদেশি বিনিয়োগের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চীন, জাপান, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র্র, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান ও হংকংসহ ১৪টি দেশ।
গত কয়েক বছরে কুমিল্লা ইপিেেজডে বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ। কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিকের। যাদের শতকরা ৮০ ভাগই নারী শ্রমিক। এখানে দেশি শ্রমিকের পাশাপাশি কয়েকশ বিদেশি শ্রমিকও কাজ করছেন। এখানে ৩শ’ থেকে ৪শ’ শ্রমিক দৈনিক মজুরিতে (মাস্টাররোল) কাজ করছেন। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হাজারও শ্রমিক যুক্ত রয়েছেন কুমিল্লা ইপিজেডে।এখানে যে পরিমাণ বৈদেশিক বিনিয়োগ হচ্ছে, তাতে দেশের অন্য ইপিজেড থেকে এটি সবচেয়ে সমৃদ্ধ ইপিজেড হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ হয়ে যাওয়া এখানকার পুরাতন বিমানবন্দরটি চালু হলে কুমিল্লা ইপিজেডে আরও বেশি বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Last Updated on March 10, 2025 3:02 pm by প্রতি সময়