কুমিল্লা একটি প্রাচীন শহর, সেইসঙ্গে ১৩ বছর আগে সিটি করপোরেশনের নগরী পরিচিতি পাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানসহ বড় বড় শপিংমল গড়ে ওঠায় কুমিল্লার ১৭টি উপজেলা থেকে প্রতিদিন লাখো মানুষের যাতায়াত ঘটে নগরীতে। চলাচলে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে ব্যাটারিচালিত মিশুক, অটোরিকশা (ইজিবাইক) ও থ্রি-হুইলার। ফলে যানজট সমস্যা প্রকট হচ্ছে। যানজটে পড়ে মানুষের দিনে যেমন কষ্ট হচ্ছে, সন্ধ্যা ও রাতেও একই কষ্টে পড়ছেন।
সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া নগরীর যানজট দুর্ভোগ নিরসন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন নাগরিক সমাজ। তাদের মতে, সকল অংশীজনের (স্টেকহোল্ডার) স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ যানজট নিরসনে বড় ভূমিকা রাখবে। অপরদিকে জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দাবি, নগরীর যানজট পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটা উন্নতি হয়েছে। ব্যাটারিচালিত মিশুক, ইজিবাইক ও সিএনজি অটোরিকশাগুলো চলাচলের ব্যাপারে রঙ ভিন্ন ভিন্ন করে এলাকা ও রোড ভাগ করে দিতে পারলে সুফল মিলবে বলেও মত পোষন করেন ট্রাফিক পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
জানা যায়, নগরীতে প্রায় ৪০ হাজার ব্যাটারিচালিত মিশুক, অটোরিকশা (ইজিবাইক) ও থ্রি-হুইলার (সিএনজি) চলাচল করছে। জেলা প্রশাসন, ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে গঠিত ‘যানজট নিরসন কমিটি’র যে তৎপরতা ছিল, এটি বর্তমানে নিষ্ক্রিয়ই বলা চলে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর যখন সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লাতেও ট্রাফিক পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় নগরীর সড়কে যানবাহন চলাচলে হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়। এছাড়া কুমিল্লার তিনটি উপজেলা ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার পর প্রায় ১০ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত মিশুক, ইজিবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা নগরীর রাস্তায় ঢুকে পড়ে।সৃষ্টি হয় আগের চেয়ে বেশি যানজটের চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশ। এই পরিবেশ সামাল দিতে গিয়ে বড়ধরণের হিমশিমের মুখে ট্রাফিক পুলিশকে। সম্প্রতি কুমিল্লায় নতুন পুলিশ সুপার যোগদানের পর সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেওয়া হয় নগরীর যানজট নিরসনের বিষয়টিতে। আর পুলিশ সুপারের সেই নির্দেশনায় যানজট নিরসনে সড়কে ঘাম ঝরাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ। এই সংস্থাটির দাবি, নগরীর যানজট পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হচ্ছে।
এবিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সভাপতি শাহ মো. আলমগীর খান বলেন, ‘যানজট নামের এই সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। গত কয়েকদিনে নগরীর যানজট পরিস্থিতি কিছুটা ভাল হলেও বিগত সময়ে যানজট নিরসনের বিষয় নিয়ে সকল স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করে সভা-সেমিনার তো আর কম হয়নি, কিন্তু বিড়ালের গলায় কেউ ঘন্টা বাঁজাতে চায় না। ইতিপূর্বে সমন্বিত সভায় নগরীর যানজট নিরসনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সব সিদ্ধান্ত ফাইলবন্দি। আমি মনে করি, পুলিশ, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জোরালো সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে যানজটের যন্ত্রণা থেকে মানুষ পরিত্রাণ পায়। দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোকে আগে একটি সিদ্ধান্তে একমত হতে হবে, আর এটি হচ্ছে-নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে কী পরিমাণ মিশুক, ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা চলবে। কারণ কুমিল্লার মতো একটি প্রাচীন শহরে যানবাহন চলাচলের ধারণক্ষমতা কতো হতে পারে, এটা ভাবতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো, আইনের শাসন বাস্তবায়ন করা গেলে সড়কে যানবাহন চাঁদাবাজি, চলাচলের রাস্তায় দোকান বসিয়ে টোল আদায় এসব বন্ধ হয়ে যাবে। কারো ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য জনভোগান্তি মেনে নেওয়া যাবে না।’
কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (অ্যাডমিন) কামাল পাশা বলেন, ‘নগরীতে গত তিনমাসে অন্তত দশ হাজার অটোরিকশার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এব বাহনের চালকদের একটি বড় অংশ অদক্ষ। তাদের বেপরোয়া চলাচলেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের নতুন পুলিশ সুপার মহোদয় অল্প কিছুদিন হল যোগদান করেছেন। যোগদানের পর স্যারের প্রথম নির্দেশনা শহর যানজটমুক্ত রাখতে হবে। আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ি কাজ শুরু করেছি। এরিমধ্যে যানজট পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। সামনে আরও ভাল হবে। তবে আমি মনে করি, যানজট নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই।’
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম