ওরা দুর্ধর্ষ অপহরণকারী। যাদের টার্গেট স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোর অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, আর মুক্তিপণের অর্থ না পেলে খুনের মতো জঘন্য কাজটি করতেও দ্বিধা করত না ওরা।গেলো জানুয়ারি মাসে গাজীপুর, ঢাকা, শেরপুর, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৭টি অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে।শিশু-কিশোরদের কাছে বাবার বন্ধু পরিচয়ে, বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে, রাস্তায় মায়ের স্ট্রোক হয়েছে, হাসপাতালে আছে-এসব কথা বলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অপহরণ করে নিয়ে যায় নিজেদের গন্তব্যে।
এধরণের অপহরণ ঘটনার মূল চক্রের ৬জনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওই ৬জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সালনা পলাশটেক এলাকার আব্দুল নবীর ছেলে মিল্টন মাসুম (৩৫) এবং তার স্ত্রী মোছাম্মৎ খালেদা আক্তার (৩৬), সাতক্ষীরা দেবহাটা খেজুরবাড়ীয়া এলাকার ওজিহারের ছেলে মো: শাহিন আল (৩৬), গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার জানের চালা এলাকার আব্দুল সবুরের ছেলে মামুন হোসেন (২৮), শেরপুর জেলা ও থানার দোপাঘাটের মো: চাঁন মিয়ার ছেলে মো: ইউসুফ মিয়া (৩৬), ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার আখাউড়া থানার রাজাপুর এলাকার মৃত কুদ্দুস চৌকিদারের ছেলে হাসান চৌধুরী (৪৫)।আর গ্রেফতারকৃতদের মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে অপরহণের লোমহর্ষক সব ঘটনা।
বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নূরে আলম।
প্রেসব্রিফংয়ে তিনি জানান, গত ২৩ জানুয়ারি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গাছা থানার জাঝর বিশ্ব রোড থেকে অপহরণ করা হয় টঙ্গীর শফি উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র তানভীর হোসেন সিয়ামকে (১৫)। এ ঘটনায় ২৪ জানুয়ারি গাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন গাছা এলাকার অপহৃত স্কুল ছাত্র সিয়ামের বাবা আবদুল জলিল। ২৫ জানুয়ারি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (দক্ষিণ)একটি দল অভিযান চালিয়ে নগরীর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটস এলাকা থেকে সিয়ামকে উদ্ধার করে।
এরপর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নূরে আলমেআরও জানান, সিয়াম কোচিং সেন্টার থেকে বাসায় ফেরার পথে অপহরণকারীর চক্রের একজন সিয়ামের কাছে এসে তার বাবার বন্ধু পরিচয় দেয়।পরে সিয়ামের কাছ থেকে তার বাবার মোবাইল নম্বর নিয়ে তাকে কল করে। অপর প্রান্ত থেকে কিছু বলার আগেই অপহরণকারি বলে ‘ভাই আমি আপনার ছেলেকে নিয়ে গেলাম আমার মেয়ে মিলির জন্মদিন, বাসাটাও চিনে আসবে’- এমন কথা বলে ফোন কেটে দেয়।এসময় সিয়ামকে তার বাবার সাথে কথা হয়েছে বলে মোটর সাইকেলে করে অপহরণ করে। কয়েক ঘন্টা পরে সিয়ামের বাবার নম্বরে আবার কল করে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং মুক্তিপণ হিসেবে এক লাখ টাকা দাবি করে।অন্যথায় হত্যার হুমকি দেয়। সিয়ামের পরিবার থানায় মামলা দায়ের করলে প্রথমে সিয়কে উদ্ধার ও পরে অপহরণকারী দলের ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীরা জানিয়েছে, তারা একটি চক্র। তারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অপহরণ করে গাজীপুরে এনে মুক্তিপণ দাবি করতো। মুক্তিপণের টাকা গ্রেফতারকৃত মিল্টন মাসুমের স্ত্রী খালেদা আক্তারের বিকাশ নম্বরে নেয়া হতো। মুক্তিপণ না পেলে তারা অপহৃতকে খুন করতো। গ্রেফতারকৃদের নামে গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন থানায় অপহরণ, খুন, মাদক, ছিনতাই ও ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম