গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গাছা অঞ্চলের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তার দুই সহোদরের নেতৃত্বে স্থানীয় বসুরা এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের তান্ডবের দুই দিন পরও ওরা রয়েছে অধরা।
এ ঘটনার পর এখনো এলাকাবাসীর আতঙ্ক কাটছে না। ঘটনার পর থেকে মানুষ এখন দিনের বেলায়ও ঘর থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছেন না। কিশোর গ্যাং সদস্যদের ধরতে পুলিশের কোন তৎপরতা না থাকায় এলাকাবাসী রীতিমত ভীতিকর অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। মঙ্গলবারও সুছেং টেক্সটাইলের আশপাশের রাস্তা ফাঁকা দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন কারখানার ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে নগরীর ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম রফিক ও তার দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে রবিবার কিশোর গ্যাং সদস্যদের মহড়ায় এলাকায় ব্যাপক ত্রাসের সৃষ্টি হয়। মহড়ার সময় কিশোরদের হাতে ছিলো চাইনিজ কুড়াল, অত্যাধুনিক চাকু, রডসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা। ঘটনার সময় এরা স্থানীয় সুছেং টেক্্রটাইলের সামনে সাধারণ শ্রমিকসহ পথচারীদের মারধর করে। এদের হামলায় আহত শাকিল (২১) নামের একজন পথচারিকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও কিশোরগ্যাং লালন-পালন করায় এলাকায় সামাজিক নিরাপত্তা ভেঙ্গে পড়ছে বলে অভিমত স্থানীয়দের। বিভিন্ন কারখানার ঝুট ছিনিয়ে আনতে এলাকায় নিজের আধিপত্য জানান দিতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তার দুই সহোদরের নেতৃত্বে এলাকায় যে তান্ডব হয়েছে তা রীতিমত সর্বমহলের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় অহরহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে পথচারীদের ঠেক দিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিচ্ছে। ইদানিং ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বসুরা ও মৈরান এলাকায় ঢাকা হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে যতগুলি ছিনতাই ঘটনা ঘটছে এসব প্রত্যেকটি ঘটনায় ওই কিশোর গ্যাং সদস্যরা জড়িত। এদের গডফাদার কারা গত রবিবার প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ায় তা এলাকাবাসীর কাছে ষ্পষ্ট হয়ে ওঠে।
কারখানার পাশের একজন বাড়ির মালিক বলেন, ঘটনার সময় কিশোর গ্যাং সদস্যরা চাইনিজ কুড়াল, অত্যাধুনিক চাকু এবং হাতে ব্যাগ বহন করতে দেখা গেছে। জনপ্রতিনিধিরাই যখন শান্তি-শৃংখলা বিনষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ান তখন সমাজ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ ওয়ার্ডে বাস্তবে তাই হচ্ছে। বিতর্কিত ওই কাউন্সিলরের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ছোট ছোট ছেলেরাও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে নিজেদের এখন দিনের বেলায়ও নিরাপদ মনে করি না। রবিবার জুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং যে ঘটনা ঘটিয়েছে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থেই তাকে কাউন্সিলর পদ থেকে সরিয়ে তাকে আইনের আওতায় নেয়া উচিত। নেতৃত্ব পেয়ে কিশোর গ্যাং যে ভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠছে এখনই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে এক সময় তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
প্রত্যক্ষদর্শী জনৈক শামীম বলেন, ঘটনার সময় জায়গার মালিকদের দুই-তিন জন শরিক ছাড়া কারখানার আশপাশে কেউ ছিলেন না। সেখানে অন্য কোনো পক্ষের লোকজন উপস্থিত থাকলে খুন-জখমের ঘটনা ঘটতে পারতো।
এদিকে এব্যাপারে সুছেং টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলে কাউকে পাওয়া যায়নি। কারখানার গেটে দায়িত্বরত একজন নিরাপত্তাকর্মী বলেন, গত রবিবারের ঘটনার পর কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। একান্ত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া তারা গেটের বাহিরে যাচ্ছেন না। তাদের সবার মধ্যেই একধরণের ভীতি কাজ করছে। কারখানার বিদেশী কর্তৃপক্ষ এ অবস্থায় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলতে নারাজ।
গাছা থানার ওসি মো. শাহ আলম বলেন, ‘ঝুট নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে জামেলায় কিশোরগ্যাং প্রসঙ্গ উঠে আসায় ঘটনাটি নিয়ে আমিও খুব চাপে রয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমাকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে।’
Last Updated on March 20, 2024 7:01 pm by প্রতি সময়