যথাযথ চিকিৎসাসেবা না পেয়ে স্ট্রোকের রোগী মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হককে বাড়িতে আনার পর মারা যাওয়ার ঘটনা কেন্দ্র করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিহতের পরিবার।তাদের দাবী হাসপাতালে নেয়ার পর উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার খোদাদিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হককে (৮০) বাঁচানো যেত।
নিহতের মেয়ে ফাতেমা বেগম জানান, ‘বাবামুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক স্ট্রোকের রোগী ছিলেন। মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে আবারো অসুস্থ হলে বাবার চিকিৎসার জন্য প্রথমে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।পরে চিকিৎসকরা সেখান থেকে তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল হাসপাতালে রেফার্ড করে।রাত সোয়া ১১টার দিকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নিয়ে পৌঁছি।এ সময় হাসপাতালে বাবাকে উপযুক্ত চিকিৎসা দেয়ার মতো বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসক পাওয়া যায়নি।পরে বাবাকে হাসপাতালের কেবিনে বেড দিতে বললে মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে তাদের জানানো হয়, সেখানে কোনো বেড খালি নেই। ’
ফাতেমা বেগম আরো জানান, ‘বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, এই পরিচয় দেয়ার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও নার্সরা হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে চাঁদর পেতে দেন।স্ট্রোকের রোগী নিয়ে রাতে শীতের মধ্যে সেখানে অবস্থান করার মতো পরিবেশ ও হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিত না থাকায় সেখান থেকে বাবাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসি আমরা।’
ফাতেমা আরো বলেন,‘মঙ্গলবার মধ্যরাতে চলে আসার আগে তাজউদ্দীন হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, বিজয় দিবসের দিনও বাবাকে চিকিৎসা দেয়ার মতো বড় ডাক্তার হাসপাতালে থাকবেন না। তাই পরদিন আর ওই হাসপাতালে যাওয়া হয়নি।বৃহস্পতিবার বাবাকে পপুলার হাসপাতালের নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালেই মারা মারা গেলেন।মঙ্গলবার রাতে যদি একজন স্ট্রোকের রোগীর কথা মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বশীলরা উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন, অথবা রাতে একজন স্ট্রোকের রোগী ভালো অবস্থায় রাখার ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে এভাবে চিকিৎসার অভাবে বাবাকে হারাতে হত না। ’
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ১৫ ডিসেম্বর রাত ১১টা ২০ মিনিটে ফজলুল হক ফকির নামের ওই রোগী জরুরি বিভাগে যান। তখন তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা, সে পরিচয় কেউ বলেনি। তারপরও একজন সাধারণ রোগী হিসেবে তাকে ভর্তির কাগজ/ফাইল তৈরি করে সেখান থেকে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। পরে ওয়ার্ডে কী হয়েছে তা আর কিছু জানা নেই।
হাসপাতালের মেডিসিন মেল ওয়ার্ডের বয় গোলাম মোরশেদ জানান, ওই রোগীকে তার স্বজনরা ট্রলিতে করে তার ওয়ার্ডে নিয়ে এসেছিল।পরে তার স্বজনরা ওয়ার্ডে কর্তব্যরত ইন্টার্নী ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতেও দেখেছেন। এ ব্যাপারে আর কিছুই জানে না বলে জানান ওয়ার্ড বয় মোর্শেদ।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাপসপাতালে উপ-পরিচালক তপন কান্তি সরকার বলেন, মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি।পরে সাংবাদিকদের কাছে শুনে খোঁজ নিয়ে জেনেছি ওই নামে একজন রোগী জরুরি বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর তাকে মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। ওই ওয়ার্ডে তাকে যে বেড দেয়া হয়েছে, তা পছন্দ না হওয়ায় ভর্তির ফাইল নিয়েই স্বজনরা তাকে নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করে চলে গেছেন। শুনেছি বৃহস্পতিবার সকালে তিনি মারা গেছেন।বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।কারো গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মৎ ইসমত আরা জানান, ফজলুল হক ফকির একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাকে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিন। এছাড়া protisomoy ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন ও বেলবাটন ক্লিক করে নতুন নতুন ভিডিও নিউজ পেতে অ্যাকটিভ থাকুন।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম