চট্টগ্রামে বাংলা নববর্ষরণের অনুষ্ঠানের জন্য নির্মিত মঞ্চে হামলার ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার ডিসি হিলে বর্ষররণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে নির্মিত মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়। ছিঁড়ে ফেলা হয় অনুষ্ঠানের ব্যানারও। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পাঁচ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে নগরীর ডিসি হিলে ‘সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের’ অনুষ্ঠানস্থলে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল করিম বলেন, ‘আগে থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে আমাদের ফোর্স ছিল। সন্ধ্যার দিকে কিছু দুর্বৃত্ত হামলার চেষ্টা করলেও আমরা প্রতিহত করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’
তবে আয়োজকরা জানিয়েছেন, ওসি ভাঙচুর প্রতিহত করার কথা বললেও ঘটনাস্থলে চেয়ার ও মঞ্চের কাঠামো ভেঙে পড়ে আছে। প্যান্ডেলের কাপড় ও প্যানাফ্ল্যাক্সের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।
সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ আলী টিটু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ৩০-৪০ জন ছেলেমেয়ে এসে “স্বৈরাচারের দোসররা, হুঁশিয়ার সাবধান” স্লোগান দেয়। এরপর তারা মঞ্চ ভাঙচুর করে অনুষ্ঠানের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। সোমবার সকাল থেকেই আমাদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরুর কথা ছিল। সে অনুযায়ী মঞ্চ থেকে আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করে ফেলেছিলাম। এর মধ্যে মঞ্চে হামলা করলো তারা। এ অবস্থায় সোমবার অনুষ্ঠান করার মতো অবস্থা এখন আর নেই। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়নি। আপাতত আয়োজনের প্রস্তুতি নেই।’
পরিষদের সমন্বয়কারী সুচরিত দাশ খোকন বলেন, ‘সন্ধ্যায় ডিসি হিলে আমাদের অনুষ্ঠান মঞ্চে হামলা করেছে একদল মানুষ। ফলে সোমবার অনুষ্ঠান করার মতো আর কোনও পরিবেশ ও প্রস্তুতি নেই।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন জানান, ‘ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখ আয়োজনের জন্য মঞ্চের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেছে কিছু দুর্বত্ত। তবে মূল মঞ্চের কিছুই হয়নি। আমরা এ ঘটনায় পাঁচ জনকে আটক করেছি। তাদের থানায় নেওয়া হয়েছে। ভাঙচুরের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রামের ডিসি হিলে গত ৪৬ বছর ধরে বাংলা নববর্ষ বরণ ও বর্ষ বিদায় উপলক্ষে অনুষ্ঠান করে আসছে। এবার ৪৭তম বারের মতো বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের জন্য গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়।
কিন্তু আয়োজকদের সঙ্গে প্রশাসনের সভায় নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠানের অনুমতি ঝুলিয়ে রাখা হয়। এতে অনুষ্ঠান করা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান আয়োজকরা। গত ১০ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজক কমিটির সঙ্গে বৈঠকে ডিসি হিলে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে শর্ত দেওয়া হয়, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর গানের তালিকা প্রশাসনকে আগেই দেখাতে হবে। পহেলা বৈশাখের এ অনুষ্ঠান দেখভাল করার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি তদারকি কমিটিও করে দেওয়া হয়। আয়োজকরা সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করার অনুমতি চাইলেও তাদের বিকাল ৪টার মধ্যে শেষ করতে বলা হয়। পাশাপাশি ‘বিতর্ক হতে পারে’–এমন কোনও গান বা কবিতা না রাখার অনুরোধ করে প্রশাসন।
Last Updated on April 13, 2025 9:37 pm by প্রতি সময়