হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসাধীন এক সময়ের কোটিপতি নুরু মাতুব্বর (ছবি সংগৃহিত) #
অর্থ বিত্ত সুখ সবই ছিল ‘তাজ বিড়ি ফ্যাক্টরি’র মালিক নুরু মাতুব্বরের সংসার ঘিরে। জীবনে চরম পরিশ্রম করে তিল তিল করে সম্পদ জুড়িয়েছেন। ছেলেকে লন্ডন পড়াশোনা করিয়েছেন। মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়েছেন সম্ভ্রান্ত পরিবারে। অর্থ সম্পদ সবই লিখে দিয়েছেন ছেলে মেয়েদের নামে। আজ কোটিপতি নুরুর কিছুই নেই। তার মানবেতর জীবন “বাবা কেন চাকর” সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায়।
মাদারীপুরের ‘তাজ বিড়ি ফ্যাক্টরি’র মালিক এক সময়ের কোটিপতি ব্যবসায়ি নুরু মাতুব্বর (৬৫) এর পাশে নেই তার সন্তানরা। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী একসময়কার কোটিপতি নুরু মাতুব্বরকে দেখতে তার সন্তানরাও আসছেনা। অথচ নিজের সকল সম্পত্তি ছেলে-মেয়েদের নামে লিখে দিয়ে কোটিপতি নুরু মাতুব্বর চাকরি করেন অন্যের দোকান পাহারাদারের। অসুস্থ হয়ে অসহায়ের মতো পড়ে রয়েছেন সদর হাসপাতালে।
চিকিৎসকরা বলছেন তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাবে এমন কেউ নেই। চারদিন ধরে তার খোঁজখবর নিতে কেউই হাসপাতালে আসেনি।
মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝিকরহাটি গ্রামের নুরু মাতুব্বর চরমুগুরিয়া বাজার এলাকায় তাজ বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক ও কোটিপতি ব্যবসায়ী ছিলেন। তার এক ছেলে, তিন মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। ১৫ বছর আগে ছেলে-মেয়েদের নিজের সকল সম্পত্তি লিখে দেন। বেশ কয়েক বছর আগে তাজ বিড়ি ফ্যাক্টরিও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে ছেলে মেয়েরা আর তাদের পিতার খবর রাখে না।
জীবীকার জন্য জীবনের কঠিন সময়ে এসে সেই নুরু মাতুব্বর চরমুগুরিয়া বাজার এলাকায় যেখানে তার বিড়ি ফ্যাক্টরি ছিল সেখানকার একটি দোকানে রাতে পাহাদার হিসেবে কাজ নেন। ওই দোকানের মালিক তাকে তিন বেলা খাবার দিতেন। আবার কখনও মানুষের বাড়িতে ঘুরে দু’বেলা খাবার খেতেন। দিন চারেক আগে খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করান স্থানীয় লোকজন।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মনিরুজ্জামান পাভেল জানালেন, নুরু মাতুব্বরকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। আর এজন্য দুইদিন আগে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করলেও তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই।
এদিকে বৃহস্পতিবার একটি অনলাইন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর নুরু মাতুব্বরের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় সমাজসেবা অধিদফতর। পরে মুমূর্ষু নুরু মাতুব্বরকে দেখাশোনা করার জন্য আছিয়া আক্তার নামে একজন আয়া অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, ‘সদর হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকা বৃদ্ধের খোঁজ খবর নিতে কেউ আসে না শুনে আমি সকালে হাসাপাতালে তাকে দেখতে যাই। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিয়ে আসি। একজন অসুস্থ পিতার ভরণপোষণ ও খোঁজখবর না নেয়ায় সন্তানদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম