তারুণ্যের একটি অংশ ফুলের সৌরভ ও কলমের শক্তির উপর নির্ভর করে ধীরে ধীরে আসছে সৃজনশীলতার কুঁড়েঘরে।যেখানে লেখালেখি করে নিজেকে তুলে ধরতে চায় সমাজ সচেতন ও তারুণ্যের অনুপ্রাণন মানুষ হিসেবে।দেশের সাহিত্যঙ্গনে তেমনি এক তারুণ্য ইসমত আরা প্রিয়া।যিনি লেখালেখিতে আত্মপ্রকাশের অল্প সময়ে আশা, উদ্দীপনার এবং সজীবতার দ্যুতি ছড়াচ্ছেন সাহিত্যাঙ্গনে।
ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি খুব বেশি ঝোঁক ছিল কুষ্টিয়ার মেয়ে ইসমত আরা প্রিয়ার।কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়নের রানাখড়িয়া গ্রামের মেয়ে প্রিয়া স্কুলের প্রাইমারি গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে পা রাখতেই লেখালেখির নেশায় মেতে উঠে। দশম শ্রেনিতে পড়া অবস্থা শুরু হয় কবিতা উপন্যাস লেখালেখি।কলেজে পা রেখে সাহিত্য চর্চায় নিজেকে আরও মনোনিবেশ করে তুলে প্রিয়া।লেখালেখির ব্যাপারে প্রথমে পরিবার থেকে সমর্থন না মিললেও পরে তার একটি লেখা একটি প্রকাশনা সংস্থার ভালো লাগায় প্রিয়া তার বাবাকে নিয়ে ঢাকায় যান। এরপর আর থেমে থাকেননি প্রিয়া।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করা ইসমত আরা প্রিয়ার এ পর্যন্ত তার চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
বিদ্যানন্দ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ইসমত আরা প্রিয়ার প্রথম উপন্যাস ‘কান্নাগুলোর প্রার্থনা’ ২০১৯ সালের বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হয়। জীবনের প্রথম উপন্যাসে প্রিয়া তার লেখায় এ উপমহাদেশের সমাজব্যাবস্থার চিরায়ত ঘটনা প্রবাহের ইঙ্গিত দিয়েছেন।আমাদের এই সমাজের নীরব কান্নাগুলো, যে কান্না কখনো কেউ দেখেনি, যে কান্নার শব্দ আমাদের সমাজের বেড়াজালে বিলীন হয়েছে- ঠিক সেই গল্পটার সরল ও সাবলীল উপস্থাপনা ছিল প্রিয়ার প্রথম উপন্যাস ‘কান্নাগুলোর প্রার্থনা’ বইটিতে।
২০২০ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় প্রিয়ার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘আওয়াজ’। বইটি প্রকাশ করে বিদ্যানন্দ প্রকাশনী। এছাড়াও একটি কবিতার বই ‘নীলপদ্ম’ প্রকাশিত হয় পুস্তক প্রকাশন থেকে।
এবছর করোনা মহামারির এই কঠিন সময়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশনা সংস্থা অন্যধারা প্রকাশ করেছে প্রিয়ার চতুর্থ বই ‘যাবজ্জীবন’। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে লেখা এটি সামাজিক উপন্যাস।
ইসমত আরা প্রিয়া তার ‘যাবজ্জীবন’ উপন্যাসটি নিয়ে ভূমিকায় লিখেছেন-‘এই জীবনে আমরা কেবল ততক্ষণ পর্যন্ত লড়ি, যতক্ষণ আমাদের হারানোর ভয় থাকে,বুকর ভেতর অসম্ভব কিছু চাওয়া থাকে।যেন কোন কিছুর বিনিময়ে নিজের ইচ্ছে ও স্বপ্নদের জন্য সবটুকু দিয়ে লড়ে যেতে হবে। লড়তে হবে তার জীবনের সকল চাওয়া পাওয়ার মানুষ তার জীবনের চাওয়া-পাওয়া, টিকে থাকার জন্য আসলেই অনেক কিছু করে। একের পর এক জটিল যুদ্ধ, এই যুদ্ধের শেষ নেই। জীবন মানেই শুধু বাঁচার জন্য অবিরাম লড়ে যাওয়া। অথচ একটা সময় যখন আর আমাদের হারানোর কিছু থাকে না, থাকে না অসম্ভবভাবে কোনো কিছু পাওয়ার কোনো বাসনা, তখন এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা নিয়ে আর কোনো ভয় থাকে না। সব চাওয়া পাওয়া হয়ে গেলে সব অজানা জানা হয়ে গেলে আমরা কেবল দি গুনি, দিন গুনি এক মৃত্যুতে বিলীন হবার। এই জীবন নামক কারাগার থেকে মুক্তির অনি:শেষ অপেক্ষায়।’
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম