বিশ্বজুড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ জিংকের অভাবজনিত সমস্যায় ভুগছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অফিসিয়াল তথ্য অনুসারে, বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ পর্যাপ্ত জিঙ্ক গ্রহণ করে না। ব্যাপকভাবে জিংকের ঘাটতির অন্যতম প্রধান কারণ হলো প্রোটিনের মতোই আমাদের শরীর এই পুষ্টি সংরক্ষণ করতে পারে না, তাই প্রত্যেককে তার জিংকের প্রয়োজনীয়তা নিয়মিত পূরণ করতে হয়। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগে এবারে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মানবদেহে জিঙ্কের ভূমিকা নিয়ে লিখেছেন কুমিল্লার নন্দিত সাবেক সিভিল সার্জন ও বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান
করোনার ভয়ে সচেতন মানুষ এখন চিন্তিত রোগ প্রতিরোধ নিয়ে ।কিন্তু সত্যি বলতে কি, সুষম খাবার খেলে আর নিয়মনিষ্ঠ জীবন কাটালে আলাদা করে আর কিছুই দরকার পড়ে না। তবে সেসব নিয়মে ঘাটতি থাকে বলেই সমস্যা বাড়ে। জিন্ক বা দস্তা একটি অতীব প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ। প্রায় প্রতিটি স্বাস্থ্যকর খাবারেই সেটি আছে। সেসব একটু আধটু খেলেই শরীরের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।
১৪ বছরের বেশি বয়সী ছেলে ও গর্ভবতী মায়েদের দরকার দৈনিক ১১ মিগ্রা. জিঙ্ক, মেয়েদের ০৮ মিগ্রা. ও স্তন্যদানকারী মায়েদের দরকার ১১ মিগ্রা.। কিন্তু হিসেবে বলে এটুকু চাহিদাও পূরণ হয় না- প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষের।
জিঙ্কের অভাবে শরীরে প্রায় ২০০টি এনজাইমের কাজের বিঘ্ন ঘটে বলে শরীর জুড়ে দেখা দেয় প্রতিক্রিয়া। জিঙ্কের অভাবে দেহকোষের কার্যকারিতা কমে। প্রোটিন তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটে। আর এই মুহূর্তে যা সবচেয়ে বড় চিন্তার, কমজোড় হয়ে যায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। অতএব অন্য আরও পুষ্টির পাশাপাশি নজর দিতে হবে জিঙ্কের দিকেও ।
১.প্রতি ১০০ গ্রাম লাল মাংসে (গরু খাসী) প্রায় ৪.৮ মিগ্রা জিঙ্ক আছে। আর ৮৫ গ্রাম মুরগীর মাংসে আছে ২.৪ মিগ্রা। তবে অত্যধিক চর্বি থাকে বলে সবসময় লাল মাংস খাওয়া ঠিক নয়।বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপ হ্রদরোগ ডায়াবেটিস অথবা স্ট্রোকের ঝুঁকি আছে। চিংড়ীতে আছে প্রচুর জিঙ্ক। ৫০ গ্রামে প্রায় ৮ মিগ্রা।
২. মসুর ডাল ছোলা মটরশুঁটি শিমের দানা এগুলোতে আছে প্রচুর জিঙ্ক। ৫০ গ্রাম ডাল খেলে ২.৪ মিগ্রা জিঙ্ক পাওয়া যায়।
৩. আটায় তৈরী (বিশেষ করে লাল আটা) রুটি জিঙ্কের একটি বড় উৎস।
৪. মাঝে মধ্যে বাদাম খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তো কথাই নেই। ২৮ গ্রাম কাজু বাদাম ও কুমড়োর দানায় যথাক্রমে ১.৬ মিগ্রা ও ২.২ মিগ্রা জিঙ্ক আছে ।
৫.মাঝে মধ্যে মাশরুম খেতে পারেন। লো ক্যালরির এই সবজিতে জিঙ্ক আছে পর্যাপ্ত। উপরি পাওনা হিসেবে ভিটামিন এ, ই, সি ও আয়রন।
খেতে পারেন পালংশাক ব্রুকোলি ও রসুন।
কাজেই সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে জিঙ্ক নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। অভ্যাসের সামান্য একটু পরিবর্তন আনতে পারলেই জিঙ্কের অভাবে অন্তত রোগ প্রতিরোধহীনতায় ভুগতে হবে না।তারপরও জিঙ্কের ঘাটতি আছে যদি সন্দেহ হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রতিদিন একটি করে জিঙ্ক ট্যাবলেট খেতে পারেন। এবং সাথে সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে নিতে পারেন।
লকডাউন গ্রীষ্ম বা বর্ষা কোনও কিছুই কোভিড ১৯ কে জব্দ করতে পারেনি। শুধুমাত্র শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে করোনার বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে কোভিড ১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি কোনক্রমেই কমানো যাবে না।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম