নৈতিকতা জ্ঞানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে একটি আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা বোধসম্পন্ন জাতি তৈরির প্রথম সোপান। শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি তথা প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে আদর্শ শিক্ষকের শিক্ষা থেকেই নীতি-নৈতিকতা, সততা, আচরণগত অভ্যাস, দেশ প্রেম, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, জাতির প্রতি মমত্ববোধ তৈরি করবে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। আর এখানেই শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম।
শিক্ষকতা হচ্ছে একটি মহান পেশা। শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকতা হচ্ছে পৃথিবীর প্রাচীন পেশাগুলোর একটি। সমাজের ভালো কাজ করার জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজন।সমাজের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষা ও শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে আর সেটা করবে একজন শিক্ষক। সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেটা রোধ করাও শিক্ষকদের দায়িত্ব। কেননা শিক্ষকরাই শিক্ষাথীের্দর ন্যায়-অন্যায়, সৎপথ, সঠিকপথের নিদের্শনা প্রদান করবে। সত্য-অসত্য, দেশের স্বার্থ এবং দেশের উন্নয়নের করণীয় সব বিষয়গুলো তাদের কাছে পৌঁছে দেবে একজন আদর্শিক ও দায়িত্ববান শিক্ষক।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি শিশু শৈশবের দশটি বছর পার করে দিয়ে তারুণ্যের পথে পা রাখে। এরপর ধাপে ধাপে উচ্চ মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে কমর্জীবনের দিকে এগিয়ে যায়।
সাফল্য ও ব্যর্থতার ভিত্তি রচিত হয় এই সময়। প্রাথমিক স্তরে একজন আদর্শ শিক্ষক থেকে শেখা নীতি নৈতিকতার শিক্ষা প্রভাব ফেলবে কর্মজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে।
শিক্ষা আলোকিত সমাজ বিনির্মানের হাতিয়ার। আার শিক্ষক হলো তার সুনিপুণ কারিগর। একজন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। শিক্ষক শুধু সফল নয়, একজন ভালো মানুষ হতে শেখান।
শিক্ষক হচ্ছেন সভ্যতার ধারক-বাহক। শিক্ষক শুধু শিক্ষাদানই করেন না, তিনি মানুষ গড়ার কারিগরও। পিতা-মাতা আমাদের লালন পালনে বড় করে তোলেন, প্রাথমিকস্তর থেকে শিক্ষকরা সেই সেই শিশুটিকে সুন্দরভাবে ও ভবিষ্যতে আলোকিত মানুষ হওয়ার সকল ফর্মুলা দিয়ে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। এটাই হলো শিক্ষকদের গুরুত্বের মাপকাঠি।
প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে একজন আদর্শিক ও মানসম্পন্ন শিক্ষকের যে সব গুণ থাকা বাঞ্ছনীয় এর প্রথমটাই হচ্ছে- অবশ্যই ছাত্র-ছাত্রীদের মন বুঝতে হবে। নিজের শেখার আগ্রহ থাকতে হবে। কারণ নিজের শেখার আগ্রহ না থাকলে ছাত্র-ছাত্রীদের শেখার আগ্রহ তৈরি করতে পারবেন না।
আচার-আচরণে ভদ্র হতে হবে। মিশুক হতে হবে। সততা অপরিহার্য। নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। ধৈর্যশীল হতে হবে।
আবার সমাজের প্রত্যাশা মোতাবেক একজন শিক্ষক হবেন জ্ঞানতাপস, মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত, ব্যক্তিত্ববান, চৌকস, শ্রেণি কক্ষে আগ্রহী পাঠদানকারী ও জ্ঞান বিতরণে আন্তরিক। তিনি সুবিচারক, সুপরীক্ষক, শিক্ষার মাননিয়ন্ত্রক, যুক্তিবাদী, গবেষক এবং উদ্ভাবকও। শিক্ষক হবেন সৎ, ধার্মিক, চারিত্রিক দৃঢ়তাসম্পন্ন, পরিশ্রমী, নিরপেক্ষ, হাস্যোজ্জ্বল, সুপরামশর্ক ও প্রাণবন্ত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
পক্ষান্তরে জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়ন ছাড়া সুশিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আমরা যদি শিক্ষকদের মূল্যায়ন না করি, শিক্ষকদের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন না হই, তাহলে সুশিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।
Last Updated on September 20, 2023 2:15 pm by প্রতি সময়