কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কেনার পর সংরক্ষণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কুমিল্লার পাইকারি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। অপরদিকে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এবারও সিন্ডিকেটের পাতানো ছকে পড়ে চামড়া বিক্রিতে লাভের মুখ দেখেননি তারা।
ঈদের পরদিন রোববার (৮ জুন) সকালে কুমিল্লা শহরে পাইকারিভাবে চামড়া কেনাবেচার সবচেয়ে বড় কেন্দ্রস্থল ঋষি পট্টি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানিদাতা ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেনা কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের কার্যক্রম চলছে। ঋষি পট্টির পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ী ও তাদের শ্রমিকরা ঈদের দিন রাত থেকে চামড়া সংরক্ষণে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।ঋষি পট্টিতে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঈদের দিন চামড়া কেনার পর রাত থেকে চামড়ার ছোট, বড়, মাঝারি আকার আলাদা করে লবণ দিয়ে স্তূপ করে রাখেন।
এদিকে রোববার সকালেও চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের কাজ করতে দেখা গেছে। এসময় পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, উপজেলা পর্যায়ের চামড়াগুলো আজ (রোববার) দুপুর পর্যন্ত আসবে। ঈদের দিনের কেনা চামড়া লবণ দিয়ে আপাতত সংরক্ষণে রাখা হয়েছে। আজ যেসব চামড়া আসবে এগুলোতে লবণের পরিমাণ মোটামুটি বেশি দিতে হবে। শ্রমিকরা ঈদের দিন বিকেলের পর কেনা চামড়া থেকে লেজ ও মাথার অংশ কেটে আলাদা করে। এরপর প্রতিটি চামড়ায় লবণ দিয়ে তা স্তুপ করে রাখা হয়। ঈদের রাত থেকেই নির্ঘুম কাজ করছে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
ঋষি পট্টির পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের দিন থেকে আজ রোববার বেলা বারোটা পর্যন্ত শুধুমাত্র ঋষি পট্টিতেই প্রায় বিশ হাজার গরুর চামড়া ও হাজার খানেক ছাগলের চামড়া কেনা হয়েছে।
কুমিল্লা শহরের ঋষি পট্টি ছাড়াও কাঁসারী পট্টি, দৌলতপুর, লাকসামের দৌলতগঞ্জ বাজার, চান্দিনা ও দাউদকান্দিতে চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রায় অর্ধ লক্ষ কুরবানীর পশুর চামড়া কিনে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেছেন বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ঈদে কোরবানি যারা দেন, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, আর বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। আবার কুরবানিদাতা ও বিভিন্ন মসজিদ, এতিমখানা কর্তৃপক্ষ সরাসরি শহরের বা বিভিন্ন উপজেলার পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করে থাকেন। পাইকাররা সেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজটি সেরে বিক্রি করেন ট্যানারিতে। ট্যানারি কেমন দামে চামড়া কিনবে, তা প্রতিবছর নির্ধারণ করে দেয় সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বেশ কয়েক বছর ধরে কুরবানীর পশুর চামড়া কেনাবেচা নিয়ে সিন্ডিকেটের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ আবহ ছিল। চামড়ার ন্যূনতম দাম না পেয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এবারও সিন্ডিকেটের কালো থাবা পড়েছে চামড়ার বাজারে।
ঈদের দিন চামড়া কেনাবেচার পাইকারি স্পটগুলোতে ঘুরে জানা গেছে, এবছরও কুমিল্লায় কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচায় সিন্ডিকেটের থাবা পড়েছে। ঈদের দিন সকাল বেলা ছোট ও মাঝারি সাইজের চামড়া ৪শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, বড় সাইজের চামড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে থাকলেও দুপুরের পর গড়পরতা চামড়ার দর গিয়ে দাঁড়ায় ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকার মধ্যে।
ঈদের দিন মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ছিল, কুমিল্লায় চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের ইশারায় ঈদের দিন দুপুর দুইটার পর থেকে কোরবানিদাতা ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে সিন্ডিকেটের পাতানো ছকে বড় ধরনের দরপতনের কবলে পড়েন।
# সাদিক। প্রতিসময়। ৮। জুন। ২০২৫। কুমিল্লা
Last Updated on June 8, 2025 6:35 pm by প্রতি সময়