কুমিল্লা সদর উপজেলার শহরতলীর দুর্গাপুর দিঘিরপাড় এলাকায় মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে মনির হোসেন (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার পর পরিচয় গোপন করে হাসপাতালে লাশ রেখে পালিয়ে যায় নির্যাতনকারীরা। পরে পুলিশ ‘বেওয়াশি’ হিসেবে লাশ দাফন করে।
রবিবার (১৬ মে) রাত ১১টা ৪২ মিনিটে অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘প্রতিসময়’ এসংক্রান্তে একটি সংবাদ প্রকাশ করে।
এদিকে এঘটনার রহস্য উদঘাটনের পর রবিবার দিবাগত রাতে নিহতের স্ত্রী সালমা বেগম বাদী হয়ে আট জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন।তিন সন্তানের জনক নিহত মনির কুমিল্লা সদর উপজেলার বলারামপুর গ্রামের মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে। সে একই উপজেলার দুর্গাপুর দিঘিরপাড় এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো এবং ফেরি করে গৃহস্থালী মালামাল বিক্রি করতো।
মামলায় অভিযুক্তরা হচ্ছেন-কুমিল্লা সদর উপজেলার উপজেলার ঘোড়ামারা কৃষ্ণনগর গ্রামের আমির আলীর পুত্র এরশাদ, তৌহিদ, আজাদ,রাশেদ, জাহিদ,মৃত ভোলা মিয়ার পুত্র আমির আলী, মৃত ইদ্রিস মিয়ার পুত্র আরিফ হোসেন, দুর্গাপুর দিঘিরপাড় গ্রামের মন্তাজ ড্রাইভারের পুত্র ইকরাম সহ অজ্ঞাতনাম ২/১ জন।
মামলা হওয়ার পর আসামীরা পলাতক রয়েছে। সোমবার (১৭ মে) দুপুরে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো.সোহান সরকার ,কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হক সহ পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কিছু সরঞ্জাম জব্দ করেন।
মামলায় অভিযোগ করা করা হয়, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মনির তার একটি নষ্ট মোবাইল মেরামত করার জন্য দুর্গাপুর দিঘিরপাড় এলাকার তৌহিদের নিকট দেন। কিন্তু মোবাইল সেটটি ফেরত না পেয়ে ১১ মে সন্ধ্যায় মনির মোবাইল সেটের জন্য দোকানে গেলে এ নিয়ে তৌহিদের সাথে তার তর্ক-বিতর্ক হয়। পরে মনিরকে মোবাইল চোরের অপবাদ দিয়ে তৌহিদে ভাইয়েরাসহ অন্যান্য অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন তাকে মারধর করে।
১৩ মে বৃহস্পতিবার সকালে পূনরায় একই ব্যক্তিরা তাকে বাসার অদূরে দূর্গাপুর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পেয়ে মারধর করে রাস্তা থেকে ট্রাক্টরে উঠিয়ে একই উপজেলার ঘোড়ামারা কৃষ্ণনগর গ্রামে তৌহিদের বাড়িতে নিয়ে এসে মারধর করে উঠানে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। এমনকি পানি খাইতে চাইলেও তাকে দেওয়া হয়নি। এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় জরুরী বিভাগের রেজিষ্টারে মনিরের নাম ঠিক লিখলেও পরিচয় অজ্ঞাত হিসেবে লেখা হয়। রাতে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
পর দিন শুক্রবার (১৪ মে) হাসপাতাল থেকে কোতয়ালী মডেল থানায় খবর দেয়ার পর পুলিশ ময়নাতদন্তের পর মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের জন্য মরদেহ আঞ্জুমানে হস্তান্তর করে। ১৫ মে শনিবার নগরীর টিক্কাচর কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে মনিরের দাফন সম্পন্ন হয়।
নিহত মনির হোসেনের ভায়রা ভাই আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়ন ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন ও নিহতের শ্যালক সালাউদ্দিন জানান, মনিরকে মারধর করে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এ নিয়ে আমাদের নিশ্চিত কোন ধারনা ছিল না। তাই হাসপাতাল, কারাগার এবং সর্বশেষ থানায় গিয়ে ছবি দেখে নিশ্চিত হই বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা ব্যক্তিই মনির।
নিহত মনিরের স্ত্রী ও মামলার বাদী সালমা বেগম জানান, মামলায় অভিযুক্ত এরশাদ ও তৌহিদ তাদের অপর সহযোগীদের নিয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। তারাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত জেনে পালিয়ে যায়। ঘটনার শুরুতে এলাকার লোকজন প্রভাবশালী এসব আসামিদের বিরুদ্ধে মুখ না খুললেও মনিরের মৃত্যুর পর এখন তারা মনিরের উপর ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছে। তিনি অবিলম্বে ঘটনায় জড়িত সকল আসামির গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছেন। এছাড়া নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেন, মনিরকে নির্যাতনের পর থানা নিয়ে চোর হিসেবে সোপর্দের চেষ্টা,হাসপাতালে অজ্ঞাত পরিচয়ে ভর্তি, বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফন, এমনি বাদীপক্ষকে মামলা করতে নিরুসাহিত করা সহ বিবাদীদের বিভিন্ন অপকৌশল শিখানোসহ কলকাটি নাড়ছেন একজন পুলিশ সদস্য যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আনোয়ারুল হক জানান, ‘হাসপাতাল থেকে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে ওই ব্যক্তির লাশ দাফন করার আগে বিধি মোতাবেক ময়নাতদন্ত করা হয়। তার পরিবারের লোকজন এসে ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেছে। নিহতের স্ত্রী ৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। সকালে আসামিদের বাড়ি থেকে ভেলচা, রশিসহ বেশ কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত রয়েছে এখন সবাই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।’
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম