কৃৃৃষিশস্য, মৎস্য এবং গবাদি পশু পালনের ক্ষেত্রে কুমিল্লার মানুষ সব সময় এগিয়ে। কিন্তু এবারের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় এই তিনটি খাতে সম্মিলিতভাবে প্রায় ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি খাতে। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৮৪৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে মৎস্য খাতে ক্ষতি ৪০৪ কোটি টাকা এবং প্রাণীসম্পদ খাতে ৩০৮ কোটি। সংশ্লিষ্ট তিনটি দফতর থেকে পৃথকভাবে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির এ তথ্য জানা গেছে।
ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লার ১৪টি উপজেলা আক্রান্ত হলেও বাকি ৩টি উপজেলার ফসলের মাঠও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টানা ভারি বৃষ্টিপাতে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ৬৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর ফসলি জমি। এখন পর্যন্ত কুমিল্লা জেলাজুড়ে কৃষি খাতে ৮৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যা অতীতে কৃষি খাতের যেকোনো ক্ষতির চেয়ে কয়েকগুন বেশি।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা জুড়ে মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছিল। বন্যায় ৬৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ফসলের মধ্যে ২২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার রোপা আমন বীজতলা, ২৬৯ কোটি ৯৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকার রোপা আমন, ৪৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকার খরিপ শাকসবজি, ২৯৭ কোটি ৮৫ লাখ ৭২ হাজার টাকার রোপা আউশ এবং ৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকার আখ ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, বৃষ্টির পানি ও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির যে চিত্র এখন পর্যন্ত উঠে এসেছে, এটি প্রাথমিক তালিকা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
মাছ উৎপাদনে কুমিল্লা জেলা বাংলাদেশে তৃৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এখানে নদ-নদী, পুকুর, দিঘী, জলাশয় ও প্লাবন ভূমিতে জেলার চাহিদার দ্বিগুণের বেশি মাছ উৎপাদন হয়। কিন্তু এবারের চলমান বন্যায় মৎস্য খাতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে প্রাথমিকভাবে এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৪০৪ কোটি টাকা নিরূপন করা হয়েছে। কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলমান বন্যায় কুমিল্লা জেলায় ৫ হাজার ৮৩৫ দশমিক ছয় এক হেক্টর আয়তনের মোট ২৩ হাজার ৪২টি খামার বা পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরুড়া উপজেলায়। এখানে মোট ৩ হাজার ৭৪৯টি মাছের খামার বা পুকুর বিনষ্ট হয়েছে।
অন্যান্য উপজেলার মধ্যে ব্রাহ্মণপাড়ায় ১ হাজার ১০টি, বুড়িচংয়ে ১ হাজার ৮০০টি, নাঙ্গলকোটে ৩ হাজার ১৬২টি, লালমাইয়ে ২ হাজার ৭টি, মনোহরগঞ্জে ২ হাজার ৩৫০টি, আদর্শ সদরে ২ হাজার ৪৫২টি, মুরাদনগরে ৮০০টি, চান্দিনায় ২০০টি, লাকসামে ২ হাজার ৫০০টি, তিতাসে ২২টি, দেবিদ্বারে ৪০০টি, চৌদ্দগ্রামে ১ হাজার ৮৪০টি এবং সদর দক্ষিণে ৬৬০টি মাছের খামার বা পুকুর পানিতে তলিয়েছে।
এছাড়াও সদরের জাঙ্গালিয়া, দেবিদ্বার, চান্দিনা, বুড়িচং, লাকসাম, হোমনা এবং চৌদ্দগ্রামে মোট ২ দশমিক ৬৯ হেক্টর আয়তনের মৎস্যবীজ খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, বন্যায় মৎস্য খাতে ৪০৪ কোটি টাকার ক্ষতির পরিমান প্রাথমিকভাবে তালিকা করা হয়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা যাবে।
এদিকে কুমিল্লা জেলায় কৃষি ও মৎস্য খাতের পাশাপাশি প্রাণীসম্পদেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলাজুড়ে এ খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৩০৮ কোটি টাকা। যা আরও বাড়তে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাণীসম্পদ কার্যালয় জানিয়েছে, ভয়াবহ বন্যায় জেলাজুড়ে ৪ হাজার ২১৩টি গবাদিপশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২ লাখ ৯ হাজার ৯১৪টি বিভিন্ন শ্রেণির গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে। হাঁস-মুরগির মধ্যে ২ হাজার ২১৮টি খামারে ৩১ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৯টি হাঁস-মুরগির মধ্যে ২১ লাখ ৭ হাজার ৩৫৩টি মুরগী, ৩১ হাজার ৬৯৩টি হাঁস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ১০ লাখ ২২ হাজার ৩৪২টি মুরগী এবং ২ হাজার ১৬০টি হাঁস। প্লাবিত হয়েছে ২ হাজার ১ দশমিক ৫ একর চারণভূমি।খাদ্যের মধ্যে ২ হাজার ৬০৩ টন পশুপাখির দানাদার খাবার বিনষ্ট হয়েছে। ৫৫ হাজার ৪৩৪ টন পশুপাখির খড় বিনষ্ট হয়েছে। এছাড়াও ৫৮ হাজার ৭৫১ টন ঘাস বিনষ্ট হয়েছে।
জেলা প্রানীসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, কুমিল্লায় বন্যায় প্রাণসিম্পদে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। আমরা ৩০৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম