একজন ভিক্ষুকের মৃত্যুতে শোকাহত উপজেলাবাসী।জীবদ্দশায় ওই ভিক্ষুক পরম ভালোবাসার সেতুবন্ধন তৈরি করেছিলেন উপজেলার মানুষজনের সাথে।তাইতো ওই ভিক্ষুকের মৃত্যুতে গভীর শোকাহত মানুষগুলো তার সৎকারে যেমন মানবিকতার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন তেমনি মৃত্যুর চল্লিশদিন পর তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে চল্লিশ দিনের দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অনন্য নজির স্থাপন করলেন উপজেলাবাসী।চল্লিশ দিনের দোয়া অনুষ্ঠানের উদ্ধোধন করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।
বলছি, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলাবাসীর কথা। আইয়ুব পাগলা নামে এক ভিক্ষুকের প্রতি উপজেলাবাসীর এতোটা মানবিকতা ও দরদ সৃষ্টি হয়েছিল, যা তার মৃত্যুর পর আরও ব্যাপকভাবে বহি:প্রকাশ ঘটেছে।ওই উপজেলার ছোট বড় হাজার হাজার মানুষ আইয়ুব পাগলাকে ভীষন ভালবাসতো। আইয়ুবের নামটি ছাড়া আর কোন পরিচয় জানেন না উপজেলাবাসী।গত ২০ সেপ্টেম্বর ভিক্ষুক আইয়ুব পাগলা মৃত্যুবরণ করলে গোটা উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে আসে। লোকজন নিজেদের ব্যবস্থাপনায় আইয়ুব পাগলার কাফন দাফন সম্পন্ন করে।
আইয়ুব পাগলার মৃত্যুতে উপজেলাবাসী কেন এতোটা শোকাহত হয়ে পড়েছেন- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আইয়ুব পাগলা বলতেন ‘একটা ট্যাকা দে, মুই ভাত খামো।’ আইয়ুব পাগলার জন্ম কোথায় আর কীভাবে তিনি সাঘাটার উল্যাবাজারে এসেছিলেন এর সঠিক কোনো তথ্য জানা না থাকলেও এখানে অনেক দিন বসবাস করেছেন। তার প্রতি সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভালোবাসা, মমতা সৃষ্টি হয়। আইয়ুব পাগলা কারও ক্ষতি করতো না। ক্ষুধা লাগলে মানুষের কাছে খাবার চাইতো সবাই ওকে ভালোবেসে খাবার দিত, টাকা দিত। মাঝে মাঝে আইয়ুব পাগলা অদৃশ্য হয়ে যেত। ১০-২০ দিন আবার কখনও ১-২ মাস পর আমাদের মাঝে হাজির হতো। এমনিভাবে মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায় স্থান করে নেয় আইয়ুব পাগলা।
ভিক্ষুক আইয়ুব পাগলার মৃত্যুর পর এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তে স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিদের অর্থায়নে ৪০ দিন পরে (৩০ অক্টোবর) শুক্রবার সকালে সাঘাটার ঐতিহ্যবাহী ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ব্যাপক পরিসরে ‘আইয়ুব-এর মজলিস’ বা চল্লিশ দিনের দোয়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে মুসলমাদের জন্য তিনটি গরু ও একটি খাসি এবং হিন্দুদের জন্য দুটি খাসি আলাদা রান্না করা হয়েছিল।
সাঘাটার ভরতখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আজাদ শীতল বলেন, এই পাগলের প্রতি হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসার প্রমাণ মিলেছে তার আত্মার মাগফিরাতের দোয়া অনুষ্ঠানের চিত্র দেখে। সবই আল্লাহর ইচ্ছা।
জাতীয় সংসদ ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, আইয়ুবের জানাজার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মজলিস (চল্লিশদিনের দোয়া অনুষ্ঠান) করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার এটি করা হল। পরপারে আইয়ুব যেন শান্তিতে থাকে সেই দোয়া করি। আইয়ুব পাগলা সবার হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিন। এছাড়া protisomoy news ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন ও বেলবাটন ক্লিক করে নতুন নতুন নিউজ পেতে অ্যাকটিভ থাকুন।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম