
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভাজকে নানা প্রজাতির ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যের মুগ্ধতা নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছচ্ছেন যাত্রীরা। পিচঢালা সড়কের বুকজুড়ে ফুলের বর্ণিল মেলা। প্রকৃতিতে গ্রীষ্মকাল মানেই পুষ্পপল্লবে ভরে ওঠার উপস্থিতি জানান দেওয়া।ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রামের শেষপ্রান্ত মোহাম্মদ আলী পর্যন্ত প্রায় ১০৫ কিলোমিটার অংশে অন্তত ৮০ কিলোমিটার বিভাজক নানা প্রজাতির ফুলে বর্ণিল সাজে সেজেছে। এছাড়াও ফেনি থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেইট পর্যন্ত বিভাজকেও রয়েছে নানা প্রজাতির ফুল গাছ।বিভাজকে ফুটে থাকা সোনালু, টগর, ক্যাসিয়া, বকুল, কাঞ্চন, করবী, কুর্র্চি, হৈমন্তী, গন্ধরাজ, রাধাচূড়া, জারুল, পলাশসহ নানা জাতের ফুলের সৌন্দর্য এক মনোমুগ্ধকর আবহ তৈরি করেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে।

গ্রীষ্মের এই সময়ে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এসব ফুলের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যানবাহনের জানালা দিয়ে ফুলের এই অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করেন মহাসড়কে চলাচলকারিরা।লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ, গোলাপী, সাদা ও নানা রঙের ফুলের মনোরম দেখতে দেখতে গন্তব্যে যাচ্ছেন, ফিরছেন যাত্রীরা।মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের মধ্যে সোনালু ফুলের গাছের সংখ্যাই বেশি।ফুলের এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য কেবল যাত্রীই নয়, পথচারিদেরও বিমোহিত করছে। বাতাসে ভেসে আসা ফুলের সুবাসে মেতে ওঠে মন।মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফুল ফুটেছে দাউদকান্দি, চান্দিনা, কোরপাই, নিমসার, নন্দনপুর, চৌদ্দগ্রামে।

সড়ক ও জনপদ সূত্র জানায়, বিভাজকের এক পাশের আলো যেন অন্য পাশে এসে দুর্ঘটনা না ঘটায় তাই কম উচ্চতার ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং বিভাজক দখলমুক্ত রাখতেও এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিভাজকে কেবল কম উচ্চতার ফুলের গাছ লাগিয়ে প্রকৃতির যে অপরূপ দৃশ্যের দেখা মিলছে তা-ই নয়, সড়ক স্লোপে কৃষ্ণচূড়া, জলপাই, অর্জুন, কাঁঠাল, মেহগনি, শিশু, আকাশমণি, চালতা, নিম, একাশিয়া, হরিতকীসহ বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য গাছ লাগানো হয়েছে। একদিকে রংবেরঙের বাহারি ফুলের মনমাতানো সৌরভ আরেক দিকে সবুজের হাতছানি যেনো সৌন্দর্যের চাদরে ঘিরে রেখেছে মহাসড়ক। গ্রীষ্মের বাতাসে বৃষ্টির মতো ফুলের পাঁপড়ি উড়ে পড়ছে রাস্তায়, চলন্ত গাড়িতে।যেনো মহাসড়কে চলাচলকারি যানবাহনগুলোকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। মহাসড়কে কখনো জ্যাম সৃষ্টি হলে অনেক যাত্রী যানবাহনের জানালা দিয়ে মোবাইল ফোনে বিভাজক ঘিরে ফুলের অপরূপ দৃশ্যের ছবি বা ভিডিওধারণ করে থাকেন।

হাইওয়ে পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি ও কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, ‘ফুল মানুষের মনকে পুলকিত করে। বিভাজকে ফুলের এমন সমারোহ মহাসড়ককে যেমন করেছে নান্দনিক তেমনি নানা প্রজাতির বাহারি ফুলের সৌন্দর্য মহাসড়কে চলাচলকারীদের মুগ্ধ করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে দীর্ঘ যাত্রা ফুল ও গাছপালার এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ভ্রমনকারিদের বিমোহিত করছে।মহাসড়কের বিভাজক ঘিরে ফুল এবং গাছপালার এই সৌন্দর্য যাতে কেউ নষ্ট বা ক্ষতি করতে না পারে এজন্য হাইওয়ে পুলিশেরও নজরদারি রয়েছে।’
পরিবেশবিদ অধ্যাপক মতিন সৈকত বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেইট পর্যন্ত সড়ক স্লোপে নানা প্রজাতির গাছ-গাছালি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি সড়ক বিভাজকে নানা বর্ণের বাহারি ফুলের শোভা মহাসড়কের সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করেছে।এগুলোর সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে মহাসড়কের এ সৌন্দর্য অটুট থাকবে এবং প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব মহাসড়ক গড়ে ওঠবে।’
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা জানান,‘মহাসড়কের বিভাজকে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছে একদিকে নানা বর্ণের ফুল সড়কের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। অপরদিকে বিপরীত দিক থেকে আসা হেড লাইটের আলো অন্য লেনের গাড়ির ওপর পড়ছে না। দুর্ঘটনা কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এসব ফুল গাছ। আবার পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করছে।’
Last Updated on May 10, 2025 11:57 am by প্রতি সময়
এই ধরনের আরও খবর...