চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পৌর এলাকার কামাল পাড়া রোড়ে কনক কমিউনিটি সেন্টার ও পশু হাসপাতালের পিছনে মারকাজুল কোরান ইসলামি একাডেমি মাদরাসার হিফজ বিভাগের ৮ বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থী ইয়াসিনকে বেত্রাঘাতে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর মাদরাসা শিক্ষক ইয়াহিয়াকে মঙ্গলবার (৯ মার্চ) রাতে উপজেলা প্রশাসন আটক করলেও শিশুটির মা-বাবা রাত দুইটা পর্যন্ত উপজেলা অফিসে অবস্থান করে এব্যাপারে কোন অভিযোগ করবেন না বলে সেই শিক্ষককে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষককে ছাড়িয়ে নেয়ার বিষয়টি নিয়েও ফেসবুকে প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠে।এস এম রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী নামে একজন লিখেছেন, ‘সত্যিই অবাক হলাম আমাদের সহজ-সরল ধর্মভীরু মা-বাবা দেখে! বেহেস্তের লোভে হুজুর নামের এসব জল্লাদ কশাইর হাতে সন্তানকে সঁপে দিচ্ছে!’
কুতুব উদ্দিন চৌধুরী নামে একজন লিখেছেন, ‘ফৌজদারি অপরাধ ঘটলে এর শাস্তি বিধান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য।’
এঘটনার বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘স্থানীয় একজন শিশুটিকে প্রহারের ঘটনা আমাকে জানান। ইতোমধ্যে বিষয়টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। আমি তাৎক্ষণিক হাটহাজারী থানার একটা টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে চকলেট নিয়ে যাই। বাচ্চাটির সঙ্গে কথা বলি এবং অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব এমন সময় ছাত্রের বাবা-মা এসে কান্নাকাটি করেন এবং শিক্ষককে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে জানান।’
তিনি বলেন, ‘তারা কিছুতেই মামলা করবেন না এবং আমাদেরকেও আইনগত ব্যবস্থা না নিতে অনুরোধ করেন। তাদেরকে অনেক বুঝানো সত্ত্বেও তারা লিখিতভাবে আমাদের অনুরোধ করেন আইনি ব্যবস্থা না নিতে। রাত ২টা পর্যন্ত অভিভাবকেরা আমার কার্যালয়ে অবস্থান করেন যেনো আইনি ব্যবস্থা না নিই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি রাত ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি এই ঘটনায় মামলা দায়েরের জন্য। মামলার খরচসহ আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দেয়ার পরেও লেখাপড়া না জানা মা-বাবা কোনোভাবেই অভিযোগ দায়েরে রাজি হয়নি। হাফেজি মাদরাসাগুলোতে এভাবে নির্মম নির্যাতন নিয়মিত ঘটনা। কিন্তু কেউ অভিযোগ দায়ের করেন না। এটিও সমাজের বৈকল্যতা।’
জানা গেছে, হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী শিশু ইয়াসিনকে সোমবার (৮ মার্চ) বিকেলে তার মা পারভিন আক্তার ও বাবা মোহাম্মদ জয়নাল মাদরাসায় গিয়ে দেখতে যান। ছেলেকে দেখে ফেরার সময় ছোট্ট শিশুটি মা-বাবার সঙ্গে বাড়ি যাওয়ার বায়না ধরে। এক পর্যায়ে সে মা-বাবার পিছু নিয়ে মাদরাসার মূল ফটকের বাইরে চলে আসে।
আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মাদরাসার শিক্ষক (হুজুর) ইয়াহিয়া। মা-বাবার সঙ্গে মূল ফটকের বাইরে কেন গিয়েছে শুধু এই কারণে তিনি শিশুটিকে বাইরে থেকে ধরে এনে একটি কক্ষে নিয়ে বেত দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। আর শিশুটি বাঁচার আকুতি জানাতে থাকে। তারপরেও ক্ষান্ত হননি নিষ্ঠুর ইয়াহিয়া। অনবরত চলে তার পিটুনি।
এ সময় শিক্ষার্থীদের কেউ একজন ওই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করলে এটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। ছোট ওই শিশুটির ওপর নির্মম নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবী ওঠে ফেসবুকে। সৈয়দ শহীদুল ইসলাম গুল্লু নামে একজন ফেসবুক ইউজার লিখেছেন- ‘শিক্ষকতার আগে নিজেকে সুশিক্ষিত হতে হয়। প্রতিষ্ঠান সহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরী।’ গিয়াস উদ্দিন নামে একজন লিখেছেন- ‘এই কুলাঙ্গার কে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।’
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম