কুমিল্লার সবচেয়ে বড় বরই বাগান মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল। বিদেশ ফেরত ইউনুছ ভূঁইয়া গড়েছেন এই বাগান। তিন বছরে বিক্রি করেছেন অর্ধ কোটি টাকার বরই। ইউনুছ ভূঁইয়া চৌদ্দ বছর সৌদি প্রবাস জীবন শেষে দেশে আসেন ২০২০ সালে। করোনার বেকার সময়কে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠেন সফল উদ্যোক্তা।
প্রথমেই ব্যক্তিগত ১০ বিঘা জমির সাথে আরো ৫০ বিঘা পতিত জমি লিজ নিয়ে পুরো জায়গায় শুরু করেন মাছের প্রজেক্ট। কিন্তু সফল হতে পারেননি। এতে হতাশ হননি তিনি। এরপর মাছের প্রজেক্টে্ে ফলের বাগান করার কাজ শুরু করেন। তার এই কাজ দেখে স্থানীয়রা উপহাস ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে থাকেন। কারণ মাছের প্রজেক্টের ভেতর কিভাবে ফলবাগান হয় ? পানিতে সব গাছ ডুবে মরে যাবে। কেউ কেউ তাকে পাগলও বলেন। লোকের কথায় কান না দিয়ে তিনি তার কাজ করতে থাকেন। বিশ্বাস ছিল সফল হবেন। ইউটিউব ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় মাছের প্রজেক্টের ভেতর লাগিয়েছেন ৩ হাজার বরই, ৭ হাজার লেবু, ৮শ কলা গাছ, মাল্টাসহ নানা জাতের সাথী ফসল ফলিয়ে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেন ।
বর্তমানে তার বাগানে বল সুন্দরী বরইয়ের বেশ ফলন হয়েছে। গাছের পাতায় পাতায় বরই দোলছে। বল সুন্দরী জাতের বরই দেখতে খুবই সুন্দর। খেতে মিষ্টি- অধিক রসালো ও পুষ্টিগুনে ভরপুর। তিন হাজার বরই গাছ থেকে তিন বছরে বিক্রি করেছন প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বেশি বরই।
কৃষক ইউনুছ ভূইয়া বলেন, আমি বিদেশে ছিলাম। সেখানে কৃষি খামারের তত্ত্বাবধানে কাজ করেছি। দেশে এসে কোভিডের কারনে আর বিদেশ যেতে পারি নাই। বেকার হয়ে পড়ছিলাম। অনেক ভাবনা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেই যে আর অন্যের অধীনে চাকুরী করবো না। এবার উদ্যেক্তা হয়ে নিজেই কিছু একটা করব। এরপর আমার পরিত্যক্ত ১০ বিঘা জমির সাথে আরো ৫০ বিঘা জমি লীজ নিয়ে একটি মাছের প্রজেক্ট তৈরি করি। দুই বছর পর আরো ৫ বিঘা জমি ক্রয় করি।
তিনি বলেন, মাছের ব্যবসা ভালো না হওয়ায় প্রজেক্টের ভেতর বড়ই ও লেবুর বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই। মাছের প্রজেক্টের মত নীচু জায়গায় ফলবাগান করছি দেখে এলাকার মানুষ আমাকে পাগল বলছে। সমালোচকদের কথায় কান না দিয়ে নাটোর থেকে আড়াই মাস বয়সী বরই ও লেবুর চারা এনে রোপন করি । চারা রোপনের ৩ মাস পর বাগানের প্রতিটা গাছে বরই আসে। প্রথম বছর প্রায় দেড় লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছি। পরের বছর ৩০ লাখ, এবারে কম হলেও আশা করছি ২৫ লাখ টাকার বরই বিক্রি হবে।
ইউনুস ভূইয়া বলেন, একটি গাছে ৩০ থেকে ৪০ কেজি বড়ই আসে ।পাইকারদের কাছে ৮৫ টাকা কেজি দরে বরই বিক্রি করছি। বাগানে প্রতিদিন ১০ জন শ্রমিক কাজ করে। এছাড়াও বাগান নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষনিক দুইজন লোক নিয়োজিত আছে। আমার বিশ্বাস ছিল সফল হবো এবং হয়েছি।
মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেন, কুমিল্লার সবচেয়ে বড় বরই বাগান কাজিয়াতল। আমি ও উপসহকারী কর্মকতারা রীতিমত এই কৃষি প্রজেক্টটি দেখাশোনা করছি। কৃষক ইউনুছ ভূইয়ার মত যারা উদ্যোক্তা হয়ে পরিত্যক্ত জমিতে বাগান ও কৃষি কাজ করতে চায় আমরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা, পরামর্শ দেওয়া হবে।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম