ইসলাম যে পাঁচটি স্তম্ভের ওপর যুগ যুগ ধরে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত রয়েছে ,তার অন্যতম একটি যাকাত। ঈমান ও নামাজের পরই যাকাতের স্থান। পবিত্র কোরআনের অনেক স্থানে নামাজের সঙ্গে যাকাতের কথা বর্ণিত হয়েছে। তাই বলা যায়, যাকাত ইসলামের অত্যন্ত মর্যাদা ও ফজিলতপূর্ণ, অবশ্য পালনীয় একটি বিধান। যা সঠিকভাবে আদায় করলে একদিকে বিত্তবানদের সম্পদ পরিশুদ্ধ ও পবিত্র হয়।
অন্যদিকে সমাজ ও রাষ্ট্রে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া নিপীড়িত, নিষ্পেষিত বিশাল এক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যতা ও অসচ্ছলতা দূর হয়ে শান্তি ও সচ্ছলতার মুখ দেখে। অর্থাৎ যাকাত হলো গরিবের অধিকার। পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াত ও হাদিসে যাকাত আদায়ের ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে জাকাতের ফজিলত ইরশাদ হচ্ছে, '(হে নবী!) আপনি তাদের মাল থেকে সদকা (যাকাত) উসুল করুন। যাতে আপনি এর মাধ্যমে তাদেরকে পবিত্র ও পরিশোধিত করতে পারেন। আপনি তাদের জন্য দোয়া করুন। নিঃসন্দেহে আপনার দোয়া তাদের জন্য সান্ত্বনা স্বরূপ। বস্তুত আল্লাহ সব কিছু শোনেন, জানেন।' (সুরা তওবা: ১০৩)।
আরেকটি আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, 'যারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি শস্যদানার মতো। যাতে সাতটি শীষ জন্মায়। এর প্রত্যেকটি শীষে একশত করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।' (সুরা বাকারা: ২৬১)।
যাকাত ইসলামের সেতুস্বরূপ:
আবু দারদা (রা.) সূত্রে হাদিসে যাকাতের ফজিলত বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যাকাত ইসলামের সেতু।' (আল-মুজামুল কাবীর ৪৩২৭) অর্থাৎ নদী বা খাল বিলে যেমন সেতু ছাড়া সুষ্ঠুভাবে চলা যায় না; ঠিক তেমনি যাকাত না দিলে ইসলামের ওপর সঠিকভাবে চলা যায় না বা চলতে পারে না।
যাকাতে সম্পদের অকল্যাণ দূর হয় :
হযরত জাবের (রা.) সূত্রে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করল, যে সম্পদের যাকাত আদায় করে, আপনি তার ব্যাপারে কি বলেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত আদায় করল, তার দ্বারা তার সম্পদের অকল্যাণ ও মন্দ দিক দূর হয়ে গেল।' (আল-মুজামুল আউসাত: ৪৩৩৪)
অর্থাৎ বোঝা গেল, যে সম্পদের যাকাত দেয়া হয় না তার মধ্যে বরকত থাকে না।
যাকাত প্রদান ঈমানের আলামত:
ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, 'তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি ঈমান রাখে, তার উচিত তার সম্পদের যাকাত দেয়া।' (আল-মুজামুল কাবীর: ৪৩৪৫)।বোঝা গেল, যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত আদায় করে না; তার ঈমানের মধ্যে ঘাটতি থেকে যায়।
যাকাত প্রদানে ঈমানের স্বাদ লাভ হয়:
আব্দুল্লাহ ইবনে মুয়াবিয়া (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'তিনটি কাজ এমন রয়েছে, যে ব্যক্তি সেগুলো করবে সে ঈমানের স্বাদ লাভ করবে। কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য ইবাদত করবে এবং বিশ্বাস পোষণ করবে যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের জন্য আর কেউ নেই এবং প্রতিবছর নিজের সম্পদের সন্তুষ্টচিত্তে যাকাত আদায় করে।' (আবু দাউদ: ১৫৮২) । ঈমানের স্বাদ লাভ হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ কয়টি বিষয়। যারা যাকাত বর্জন করে, তারা এই মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়।
যাকাত সম্পদে ঘাটতি আনে না:
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যাকাত সম্পদে ঘাটতি আনে না, ক্ষমায় সম্মান ছাড়া কিছু আনে না; বিনয় মর্যাদা বৃদ্ধি ছাড়া কিছু আনে। না।' (মুসলিম: ৬৫৯২)
যাকাত সম্পদ রক্ষা করে:
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'তোমরা যাকাতের মাধ্যমে তোমাদের সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করো।' (আল-মুজামুল কাবীর ১০২১৭)
যাদের সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয়েছে, তারা যেন তাদের সম্পদের যথাযথ হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে যাকাত প্রদান করে উপরোক্ত ফজিলত লাভ করতে পারে, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : চেয়ারম্যান- গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম