মাহে রমজানের রোজা শেষে আসে মুসলিম মিল্লাতের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদ অর্থ আনন্দ। আর ফিতর বলতে রোজার সমাপ্তি কিংবা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া উদ্দেশ্য।
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। এ বছর রোজা ৩০টি পূর্ণ হলে বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বিষয়টি নির্ভর করছে চাঁদ দেখার ওপর।
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনায় নিয়োজিত থাকার পর তাতে সমাপ্তি ঘটানো ও দিনের বেলায় পানাহারের স্বাভাবিক নিয়মে ফিরে যাওয়া উপলক্ষে আনন্দ উপভোগের ব্যবস্থা দিয়েছে ইসলামী শরিয়ত। এটা শুধু অনুমতি নয়; বরং অনেকটা বাধ্যতামূলক নির্দেশ। কেননা শাওয়ালের প্রথম দিনে রোজা রাখাই নিষিদ্ধ। ঈদের দিনে পানাহার করা ও আল্লাহর নেয়ামতের স্বাদ গ্রহণ করা পালনীয় এবং এর তাৎপর্য অনেক গভীর।
ইসলামে ঈদের খুশি শুধু ধনীরা পাবে তা নয়; বরং গরিব-অসহায়রাও ঈদের খুশি ভোগ করবে। তাই ঈদুল ফিতরের সময় ধনীদের ওপর সাদাকাতুল ফিতর অত্যাবশ্যক করা হয়েছে।
মুসলমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ ঈদুল ফিতর। রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান। যারা মাহে রমজানকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছেন, তাদের জন্য ঈদ খুশির বার্তা নিয়ে আসে। রমজানের সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে না পারা নিতান্ত হতভাগা হওয়ার আলামত। অন্য দিকে যারা অবারিত রহমতের মাসটিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হন, তাদের নিয়ে গর্ব করেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের শেষে মুমিন বান্দারা যখন তাকবির পাঠ করতে করতে ঈদগাহের উদ্দেশে রওয়ানা হন, আল্লাহ তায়ালা তখন ফেরেশতাদের বলেন, যে বান্দা তার কর্তব্য সম্পন্ন করে, তার প্রতিদান কী হওয়া উচিত? ফেরেশতারা বলেন, তার প্রতিদার পূর্ণ মাত্রায় দেয়া উচিত।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দারা তাদের ওপর আরোপিত কর্তব্য পালন করে এখন আমার মহিমা ঘোষণা করতে করতে বের হয়েছে। আমি আমার মর্যাদা ও প্রতিপত্তির শপথ করে বলছি, তাদের দোয়া অবশ্যই কবুল করব। তারপর আল্লাহ ঘোষণা করেন, তোমরা ফিরে যাও। আমি তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের পাপরাশিকে সওয়াবে পরিণত করলাম। (বায়হাকি)।
ঈদের দিন ও ঈদের রাতের ফজিলত অসীম। হজরত নবী করিম (সা.) যে পাঁচটি রাতের দোয়া কবুল হওয়ার কথা বলেছেন তার মধ্যে ঈদুল ফিতরের রাতটি অন্যতম। নবী করিম (সা.) আরও বলেন, প্রত্যেক জাতিরই খুশির দিন থাকে, আর আমাদের খুশির দিন হচ্ছে-ঈদুল ফিতরের দিন (সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিম)।
ঈদের দিনটি আমাদের জন্য আনন্দের দিন। মনের সব কালিমা দূর করে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, মান-অভিমান বিসর্জন দিয়ে সবাই হাতে হাত মেলানো, বুকে বুক মেলানো, গলায় গলা মেলানো অর্থাৎ সবার দেহ-মন এক হওয়ার আনন্দ হলো ঈদের আনন্দ। নিজের মনের হিংসা, ঘৃণা, লোভ, অহঙ্কার, অহমিকা, আত্মম্ভরিতা, রাগ, ক্রোধ, বিদ্বেষসহ যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করার আনন্দ; সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির আনন্দ।
লেখক: চেয়ারম্যান- গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম