রাজধানীর কলাবাগানের একটি ইংলিশ মিডিয়া স্কুলের ‘ও’ লেভেল ছাত্রীর (১৭) মৃত্যুর ঘটনায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে।শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে নিহত ছাত্রীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।ধর্ষণের ফলে যৌন ও পায়ু পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে।’
ডা. সোহেল মাহমুদ আরও বলেন, ‘এছাড়াও ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছে কিনা, তার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে কেমিক্যাল পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।’
এদিকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বৃহস্পতিবার রাতে তানভীর ইফতেফার দিহানকে (১৮) একমাত্র আসামি করে কলাবাগান থানায় মামলা করেন।ধর্ষণের পর হত্যার দায় স্বীকার করে শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে দিহানের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তা রেকর্ডের আবেদন করে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ৭ জানুয়ারি দুপুর ১২ টার দিকে ভিকটিমকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে কৌশলে বাসায় নিয়ে যায়। এরপর আসামি নিজের ফাঁকা বাসায় ভিকটিমকে একা পেয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষণ করে। ভিকটিমকে ধর্ষণের সময় আসামির অমানবিক কার্যকলাপের কারণে ভিকটিমের যৌনাঙ্গ ফেটে গিয়ে প্রচুর পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয়। ভিকটিম অসুস্থ হয়ে পড়লে ঘটনাটি অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য তাকে আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই সে মারা যায়। প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি সত্য বলে প্রতিয়মান হয়। এছাড়া আসামি মামলার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়, এক তরুণ এক কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এনেছেন। কিশোরীর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। ওই সময় নিউমার্কেট অঞ্চল পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল হাসান ওই তরুণকে আটকে রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।কলাবাগান থানার পুলিশ দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে ওই তরুণকে (তানভীর ইফতেফার দিহান) আটক করে।
এদিকে শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ' ব্যানারে রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকে (১৭) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও স্কুলছাত্রীকে ধর্ষিত হতে হচ্ছে। যে ধর্ষণব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে, এর থেকে সহজে নিস্তার নেই। আমরা বলেছিলাম বিচারহীনতার কারণে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।'
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম