ঈদুল আযহা বা পশু কোরবানির ঈদ এলেই হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষেরা ঈদের দিন বেলা বারোটার পর থেকেই কোরবানিদাতাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে গোশত সংগ্রহ করেন। পরে এদিন বিকেলের দিকে কুমিল্লা শহরের প্রধান প্রধান মোড়গুলোতে থলে বা ব্যাগ নিয়ে বসে সংগ্রহ করা গোশত বিক্রি করেন। কোরবানির গোশত বিক্রির এই ক্ষণস্থায়ী হাটে ক্রেতার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কোরবানি দিতে না পারা মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষজন এসব গোশত কিনে থাকেন।
শনিবার (৭ জুন) বিকেলের দিকে কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়, পুলিশ লাইন, রেল স্টেশন, টমছম ব্রিজ, পদুয়ার বাজার এলাকায় দেখা গেছে এসব স্থানের রাস্তার মোড় গুলোতে চলছে কোরবানির গোশত কেনাবেচা। ৪শ' টাকা থেকে ৫শ' টাকা কেজি দরে এসব সংগৃহীত গোশত বিক্রি হচ্ছে। বাড়িতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় হতদরিদ্র, ছিন্নমূল, ভিক্ষুক, দিনমজুর শ্রেণির লোকজন বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা কোরবানির এ গোশত ঈদের দিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত বিক্রি করার সুযোগটা কাজে লাগান।
আবার কম টাকায় গরুর গোশত হাতের নাগালের পাওয়ার এ সুযোগও হাতছাড়া করতে চান না কোরবানি দিতে না পারা মধ্যবিত্ত, দূরের চাকরিজীবী, ব্যাচেলর লোকজন ও ছোটখাটো সাধারণ মানের খাবার হোটেলের মালিকরা।
কুরবানিদাতাদের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা গোশত কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বরে বিক্রি করতে আসা কুড়িগ্রামের মধ্যবয়সী সিদ্দিক মিয়া জানান, তিনি সাঁতওরা এলাকায় একটি মেসে থাকেন, দিনমজুরের কাজ করেন। ঈদের দিন সকাল থেকে শহরে বাসা-বাড়িতে ঘুরে ঘুরে প্রায় ৭ কেজি গোশত পেয়েছেন। এই গোশত মেসে রান্না করে খাওয়ার সুযোগ তার নেই, আবার এতদূর বাড়ি নিয়ে যাবেন এটাও সম্ভব নয়। তাই কম দামে বিক্রি করার জন্য রাস্তার মোড়ে বসেছেন। কেজি চার/পাঁচশ টাকা দরে বিক্রি করবেন। মাপার মেশিন বা দাঁড়িপাল্লা তার কাছে নেই। অনুমান করেই তার সঙ্গে থাকা অন্যদের মত তিনিও এই গোশত বিক্রি করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছেন।
টমছমব্রিজ এলাকায় গোশত বিক্রি করতে আসা শহরের সুজানগর এলাকার ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চালান এক মহিলা জানান, বাড়িতে ফ্রিজ নেই, আবার তেল, মসলা কিনে গোশত রান্না করে খাওয়ার টাকাও নেই। তবে ছেলের ঘরের নাতি নাতনির জন্য কিছু গোশত রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেবেন।
কুমিল্লা শহরতলীর চাঁনপুরে ভাড়া থাকেন নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের এক ক্রেতা জানান, কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই, কোরবানির গোশততে সাওয়াব ও বরকত আছে মনে করেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কয়েকবেলা খেতে পারার আশায় এক হাজার টাকায় অনুমান তিন কেজি গোশত কিনে নিয়েছেন।
সংগ্রহ করা কোরবানির গোশতের বিক্রেতা ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানি দিতে না পারা নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন ছাড়াও হাট-বাজার, বাস- ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় ঘরে ওঠা সাধারণ মানের বিভিন্ন খাবার হোটেলের মালিকরাও হতদরিদ্র, ভিক্ষুক, দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষ থেকে কোরবানির গোশত সস্তা দামে কেনার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। এসব হোটেল মালিকরা এই গোশত সংগ্রহ করে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে রান্না করে ভাতের সঙ্গে বিক্রি করে থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই শহরের রাস্তার প্রধান প্রধান মোড়ে কুরবানিদাতাদের বাড়ি থেকে সংগৃহীত গোশত বিক্রির হাট বসে। ঈদের দিন বিকেল থেকে রাত ৮টা/৯টা পর্যন্ত চলে গোশত কেনাবেচা।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম