প্রাচীন ও মোগল আমলের অসংখ্য মসজিদ কুমিল্লার ইতিহাস ঐতিহ্যকে মহিমান্বিত করেছে। বর্তমান কুমিল্লা অর্থাৎ পূর্বতন ত্রিপুরা জেলায় ত্রয়োদশ শতাব্দীর দিকে মুসলমানদের আগমন ঘটে। চতুর্দশ শতাব্দীতে এ জেলায় তুর্কী মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠার পরই এ জেলায় ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু হয়। সুলতানি আমল, পাঠান ও বারভূঁইয়াদের আমল এবং মোগল ছিল এ জেলার মুসলমান শাসনামল। মুসলমান শাসনামলের মধ্যে কুমিল্লায় মোগল আমলে নির্মিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কীতির্র সংখ্যা সবচেয়ে বেশী।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের সিঙ্গাচোঁ গ্রামে মোগল আমলের শেষে দিকে সিঙ্গাচোঁ ভূঁইয়া বাড়ি জামে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন ৪২ মৌজার জমিদার আসকর আলী ভূইয়া মসজিদটি নির্মাণ করেন।
মোগল স্থাপত্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন আর মনোরম কারুকাজের ঐতিহ্য বহন করছে সিঙ্গাচোঁ ভূঁইয়া বাড়ি জামে মসজিদ। এ মসজিদের প্রতিষ্ঠার তারিখ নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও এটি যে পাক ভারত উপমহাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম সেই বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই। তবে এটি প্রায় তিনশ বছর বছর আগে নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কুমিল্লায় মোগল আমলের স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম নিদর্শন আয়তাকার ভূমি নকশায় নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট সিঙ্গাচোঁ ভূঁইয়া বাড়ি জামে মসজিদটি প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বর্তমানে এটির সংস্কার জরুরী হয়ে পড়েছে। পুরাকৃতি হিসেবে মন্ত্রাণালয়ের অধীনে থাকায় স্থানীয়রা মসজিদটির সংস্কারের স্থানীয়ভাবে এগিয়ে আসতে পারছেন না। মসজিদের কারুকাজের অনেকাংশই নষ্ট হয়ে পড়েছে। দেওয়ালের পলেস্তার খসে পড়ছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুকিয়ে ভেতরে পানি পড়ে। ফলে ধীরে ধীরে সংস্কারের অভাবে জৌলুস হারাচ্ছে মোগল আমলে নির্মিত এই মসজিদটি।
স্থানীয় লোকজনের দাবী মসজিদের প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর ডিজাইন ঠিক রেখে সংস্কার করলে এটির ইতিহাস ঐতিহ্য টিকে থাকবে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে জমিদার আসকর আলী ভূইয়ার প্রতিষ্ঠিত নিদর্শনটি যুগ যুগ বেঁচে থাকবে।
এবিষয়ে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান জানান, মসজিদটির নির্মাণশৈলীর দিক থেকে এটি ১৭শ বা ১৮শ দশকে নির্মিত হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। মসজিদটি প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষণ করছে। আমরা এটির পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ দেখভালের কাজটি করছি। আর মসজিদের সংস্কার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আগামী কর্মপরিকল্পনায় সংস্কারের যে প্রস্তাবনার তালিকা করা হয়েছে সেই তালিকায় সিঙ্গাচোঁ জামে মসজিদের নামটি রাখা হয়েছে। বর্তমানে মুসল্লীরা যাতে ভালোভাবে নামাজ পড়তে পারে সেই দিকে আমাদের খেয়াল রয়েছে। আর মসজিদটি যখন সংস্কার করা হবে তখন যাতে পুরানো নির্মাণশৈলীর সৈৗন্দর্য বহাল থাকে এবিষয়টিও আমরা চিন্তাভাবনায় রেখেছি।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম