মুমিন-মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, সহানুভূতি ও ব্যাপক প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে রমজান মাসে।
এক মাসের প্রশিক্ষণই পরবর্তী ১১ মাসের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সব ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও বিবাদ-বিসংবাদ সৃষ্টি না করে সাম্যের আহবানে একাকার হয়ে শান্তিপূর্ণ, সুস্থ , সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য রমজান মাসে বিশেষ সুযোগ করে দেয়। রমজান মাসে মুসলিম রাষ্ট্রসমূহে একটি সাময়িক দীনি পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
রমজান মাসের সর্বত্রই শান্তির সুবাতাস বইতে থাকে। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও দুষ্কর্ম এ মাসে অনেক কমে আসে। ফলে মানুষ কাম-ক্রোধ, লোভ-লালসা, মদ-মোহ, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, জটিলতা ও যাবতীয় পাপ পঙ্কিলতাকে বশীভূত করে থাকে। রোজার বদৌলতেই সর্বপ্রকার অন্যায়, অনাচার, গীবত , মিথ্যা বলা, অশ্লীল গালি-গালাজ ও অন্যান্য দুষ্কর্ম থেকে পরিত্রাণ পায়। ফলে সর্বত্রই একটি কাঙ্ক্ষিত সুখ- শান্তির পরিবেশ বিরাজ করে। রমজান মাসে মানুষ অন্যান্য ইবাদতও বেশি করে। কারণ এ মাসে ইবাদতে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। যেমন কোরআন তেলাওয়াত করা ও শোনা, তারাবির নামাজ পড়া, এতেকাফ ও শবে কদরে বিভিন্ন আমল করা ইত্যাদি।
মাহে রমজানের দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার ফলে বাকি ১১ মাস মুসলিম জাতির জীবনকে সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে চালাতে সহায়তা করে। এ মাসের প্রধান ইবাদত হলো রোজা। রোজা পালনকারী ব্যক্তির চরিত্র যেমন সৎ এবং সুন্দর হয়ে ওঠে , তেমনি সৎ, সুন্দর মানুষদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একটি সুষ্ঠু সুন্দর সমাজ।
রমজান প্রতি বছরই আসবে, আবার চলে যাবে এটাই আমাদের চাওয়া পাওয়া নয়। রমজান থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। সে শিক্ষা গ্রহণ না করার কারণেই শান্তি ও সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা সুদূরপরাহত।রমজানের একটি শিক্ষা হলো, ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করা, উম্মাহর সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য প্রতিটি মানুষের মাঝে এ মহান গুণের অধিকারী হওয়া জরুরি। বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভ্রাতৃত্ববোধের বিকল্প নেই। আর এ গুণ সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জন করা সহজ । পবিত্র রমজানের আগেই একটা পরিকল্পনা এঁকে নেয়া- এই মাসে আমাদের কী কী কাজ করতে হবে। আবার মাস শেষে হিসেব কষতে হবে- এই একটি মাসে আমরা কী অর্জন করতে পেরেছি?
মাহে রমজান আমাদের আরও শিক্ষা দেয়, নৈতিক উৎকর্ষ সাধন, খোদাপ্রীতি ও স্বদেশানুরাগ। আর এগুলো রমজানের রোজা পালনে অধিক পরিমাণে অর্জিত হয়। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তোমার সঙ্গে অসৎ আচরণ করে, তুমি তার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তাহলে তুমি হবে প্রকৃত মুসলমান।’ তেমনি কোরআন মাজিদেও আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে মহত্তম চরিত্রের অধিকারী বলে যে ঘোষণা করা হয়েছে, সে প্রসঙ্গেও মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন- অপকারীকেও উপকার করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সেই মহত্তম চরিত্রের অংশ। কেননা তিনি নিজেই ইরশাদ করেছেন, ‘যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন কর। যে তোমার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। যে তোমার সঙ্গে মন্দ আচরণ করে, তুমি তার সঙ্গে সদাচরণ কর। মোটকথা, আল্লাহ রাসুলের (সা.) নির্দেশিত এই নৈতিক মানদণ্ডে উন্নীত হলে তাকে মুহসিন বা ইহসানকারী বলা যায় এবং সেই উপযুক্ত হয় আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহের।
ইহসানের আরেক অর্থ সুন্দর করা। যে কোনো ইবাদত সুন্দর করে সম্পাদন করা এ হিসেবে ইহসান। যে ইবাদতের যেসব নিয়মকানুন রয়েছে, সেগুলো মেনে চললে সেটি সুন্দর হয়। লেনদেন ও কার্যকলাপে শরিয়ত নির্দেশিত আইন ও শিষ্টাচার বজায় রাখলে তা সুন্দর হয়। সুতরাং রমজানের সিয়াম সাধনাসহ এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি সুষ্ঠু সুন্দর পরিবার ,সমাজ , পরিবেশ ও রাষ্ট্র গঠন সম্ভব। আমরা সেই আলোকিত সুস্থ, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ এবং পরিবেশ চাই।
লেখক : চেয়ারম্যান- গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা।
Last Updated on March 19, 2024 10:33 pm by প্রতি সময়