প্রতিবছর কোরবানীর ঈদে কামার দোকানদারদের একটা বড় টার্গেট থাকে। সারা বছরের ব্যবসার লাভের বড় অংশ কোরবানী ঈদের এ মৌসুমেই হাতে আসে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারে কামার দোকানিরা ব্যবসায় ধস নামবে এমনটি ভেবেছিল।
কিন্তু না, এবারে ব্যবসা খারাপ যাচ্ছেনা কামারপট্টির।কুমিল্লা শহরের চকবাজারের কামার দোকানিরা পশু জবাইয়ের এবং মাংস কাটাকুটির সব সরঞ্জাম শান দেয়া, তৈরি করা নিয়ে পুরোদমে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাঁপরের আগুনের শিখায় লাল করে নামিয়ে এনে হাতুড়ি পেটানোর টুংটাং শব্দে তৈরি হচ্ছে দা, বটি, ছুরি, চাপাতি। আবার শান মেশিনের আলোকছটায় মুখর হয়ে উঠেছে কামারপট্টি।
কুমিল্লা নগরীর চকবাজারের কামারপট্টিতে ঈদুল আজহায় কোররবানীর পশুর গোশত কাটার সরঞ্জাম আগেভাগে কেনা ও পুরানোগুলো মেরামত বা শান দেয়ার কাজটি সারিয়ে নিতে কুরবানীদাতাদের ভিড়ে কামাররাও গলদগর্ম হয়ে পড়েছেন। কুমিল্লা জেলার অন্যতম কামারপট্রি নগরীর চকবাজারে। প্রায় ৩৫টি কামার দোকান রয়েছে এখানে।জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও বেশকিছু কামার দোকান রয়েছে। চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী পশুরহাট ঘিরেই রয়েছে বিশাল কামারপট্টি।
চকবাজার কামারপট্টি ঘুরে দেখা গেছে, অন্য সময়ের চেয়ে দোকানে মৌসুমী কর্মচারীর সংখ্যাও বেড়েছে। পোড়া কয়লার গন্ধ, হাঁপরের হাঁসফাঁস আর হাতুড়ি পেটানোর টুং টাং শব্দে তৈরি হচ্ছে চকচকে ধারালো দা, চাপাতি, বড়-ছোট ছোড়া, বঁটিসহ নিমিষে গোশত কাটাকুটির সবধরণের উপকরণ।
কোরবানী এলেই নগরীর চকবাজারের কামারপট্রিতে দোকানিদের বেচাবিক্রি ও কেনার জন্য ব্যস্ততা বেড়ে যায় ক্রেতাদের। কোরবানীীদাতারা পশু কেনার আগে পরে গোশত কাটার সরঞ্জাম কিনে নিচ্ছেন। কেউবা গতবছরের ব্যবহৃত সরঞ্জাম শান দিয়ে চকচকে করে নিচ্ছেন। পুরনোর সাথে নতুন কয়েকটাও কিনে নিচ্ছেন।
চকবাজারের কামারশালার নোয়াব মিয়া জানান, কোরবানী এলেই বেচাবিক্রি ও লোকজনের মরিচা পড়া দা, বটি, ছোরা ইত্যাদি সরঞ্জাম ধারালো করার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ওই দোকানি আরও জানান, কাঁচা লোহা, কয়লা ও অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে দা, ছোরা ও অন্যান্য সরঞ্জাম বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এবারের ঈদে করোনার প্রভাব কামারপট্টিতে পড়েনি।
ক্রেতা ও গোশত কাটাকুটির সরঞ্জাম শান দিতে আসা লোকজন জানান, শান দেয়ার খরচ বেশি হলেও এবং দা, ছোরা ও অন্যান্য সরঞ্জামের দাম বেশি হলেও কিনতে হবে। কারণ বছরে মাত্র একবার কোরবানীর পশু কাটা-কুটা না করলে আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে।
এদিকে নগরীর চকবাজারের কামারপট্টি ছাড়াও নগরীর রাজগঞ্জ, মোগলটুলি, তেরিপট্টি এলাকার কাশারিপট্টি, কান্দিরপাড়, শাসনগাছায় ফুটপাতে দা, ছোড়া, চাপাতি বিক্রির পসরা বসেছে। প্রতিবছরই কোরবানীর ঈদ এলে ফুটপাতে গোশত কাটাকুটির সরঞ্জাম বিক্রি ও পুরানো সরঞ্জাম শান দেয়ার পসরা জমে উঠে।
আবার ভ্রাম্যমান শানওয়ালারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দা, বটি, ছোরা শাণ দিচ্ছেন। কোরবানী এলে এদেরও কদর বাড়ে। কাঁধে শান মেশিন নিয়ে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে শানওয়ালারা।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম