পশু-পাখি, বন্য প্রাণী আক্রান্ত বা আহত হওয়ার খবর পেলেই ছুটে যান তিনি। উদ্ধার করে নিয়ে আসেন বাড়িতে। পরম পরিচর্যায় চিকিৎসা দিয়ে বনে অথবা আকাশের পথে অবমুক্ত করে দেন এসব পশু-পাখি। প্রায় দুই যুগ ধরে পশু-পাখির প্রতি নিরন্তর ভালোবাসার বহি:প্রকাশ ঘটিয়ে মানবিক কাজটি করে যাচ্ছেন কুমিল্লার মতিন সৈকত।
কুমিল্লার দাউদকান্দির আদমপুর গ্রামের বাসিন্দা মতিন সৈকত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যে পড়ালেখা করেছেন। পেশায় শিক্ষক। দাউদকান্দির স্থানীয় একটি মাদরাসায় বাংলা বিষয়ে অধ্যাপনা করছেন। প্রায় ২৭ বছরের শিক্ষকতা জীবনে কেবল পাঠদান-ই নয়, কৃষি ও পরিবেশ উন্নয়ন, বিষযুক্ত ফসল, নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন, খাল-নদী পুনঃখনন, দখল-দূষণ প্রতিরোধ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুমুখী সামাজিক আন্দোলন ও সৃজনশীল কাজে রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষের অন্যতম উদ্যোক্তাও বলা হয়ে থাকে মতিন সৈকতকে।
এসব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন চারবার জাতীয় পুরস্কার। বয়স বাড়ছে, তারপরও আহত পশু-পাখির খবর পেলে ছুটে যান। পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, নদী খাল বিল দখল হচ্ছে, এমন খবর পেলে গড়ে তোলেন সামাজিক আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের মনোজগৎকে জাগিয়ে তোলার পাশাপাশি সমাজের সচেতন মানুষদের প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা ও মানবিক কাজে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই মানুষটি।
পরিবেশবিদ মতিন সৈকত বলেন, 'প্রায় ত্রিশ বছর ধরে নিঃস্বার্থভাবে পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে প্রকৃতি পরিবেশ, পশু-পাখি নিয়ে খুব ভাবতাম। গ্রামে বেড়ে উঠেছি, তাই প্রকৃতি ও পশু-পাখিকে খুব নিবিড়ভাবে দেখেছি। একটা সময় যখন দেখলাম আমরাই প্রকৃতি-পরিবেশ, পশু-পাখির ক্ষতি করছি, বিষাক্ত ফসল, মাছ খাচ্ছি তখন আর চুপ থাকতে পারিনি। প্রকৃতি-পরিবেশ বাঁচাতে সামাজিক আন্দোলন শুরু করি। সেই থেকে এখনো আছি এসব নিয়ে।'
মতিন সৈকত বলেন, 'আমাদের এলাকায় অনেক বেশি পাখি বসবাস করে। কুমিল্লার দাউদকান্দি ও আশপাশের এলাকা মাছের অঞ্চল। পাখিরা মাছ খেতে এখানে ছুটে আসে। পাখিরা এখানে এসে অনেক জায়গায় আটকা পড়ে। ২০০০ সাল থেকে আহত পশু-পাখিদের উদ্ধার করে চিকিৎসা শেষে অবমুক্ত করে আসছি। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজারের বেশি পশু-পাখিকে বিভিন্ন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে অবমুক্ত করেছি।'
তিনি বলেন, 'কেবল পশু পাখিই নয়, বিষযুক্ত শস্য, দেশি মাছ উৎপাদন, গাছ রোপণসহ নানাভাবে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জলবায়ুর চ্যালেঞ্জিং সহ বহুমুখি সামাজিক আন্দোলনে কাজ করেছি, এখনো করছি। পশু-পাখি, প্রকৃতি-পরিবেশ এবং সামাজিক, মানবিক ও দেশপ্রেমের দ্বায়বদ্ধতা নিয়ে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এভাবেই কাজ করে যেতে চাই।'
প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাওয়া কুমিল্লার মতিন সৈকত নামটি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দৃষ্টান্ত রেখেছে। কৃষক ও কৃষি নিয়ে তাঁর ইতিবাচক ও সম্ভবনাময় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) কুমিল্লার দাউদকান্দিকে বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করে। পরিবেশ প্রকৃতিপ্রেমী মতিন সৈকত নিজ গ্রামে পরিবেশ স্কুল, সামাজিক বনায়ন, বন্য পশু-পাখি অবমুক্ত, কৃষি পাঠাগার ও কৃষি মিউজিয়াম পরিপূর্ণভাবে গড়ে তোলার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম