পাগলিটাও মা হয়েছে, তবে বাবা হয়নি কেউ। পাগলি বলে যায়নি ছেড়ে, প্রসব ব্যাথার ঢেউ। রাস্তায় ঘুরে কাটে দিন, আর রাস্তায় কাটে রাত। পাগলী বলে স্বামী হয়নি, পায়নি সংসার স্বাদ। পাগলীও কি করে ছিল যৌন আহবান ?
নিলাদ্র নাজিম এর জনপ্রিয় একটি কবিতার কয়েকটি লাইনের বাস্তবরূপ দেখা মিলেছে কুমিল্লার সেনানিবাস এলাকার ময়নামতি জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু এই পাগলীর সন্তানের বাবা কে ? কোন এক লম্পটের লালসার শিকার এই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর কোল জুড়ে আসা ফুটফুটে সন্তান চোখ মেলে তার মাকে দেখলেও বাবার দেখা পেলো না।
শুক্রবার বেলা ১১টায় একটি ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান জন্ম দেন মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী। কন্যা সন্তানের দত্তক নিতে হাসপাতাল চত্বরে আগ্রহীদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুরসহ টিপরা বাজার এলাকায় ঘুর ঘুর করতে দেখা গেছে এই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে।
শুক্রবার বেলা ১১টায় ময়নামতি সেনানিবাস এলাকায় নিজে নিজেই ময়নামতি জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে ঘুরাঘুরি করতে দেখে হাসপাতালে কর্মরত লোকজন তার কাছে গেলে বুঝতে পারেন সে প্রসব বেদনায় ছটফট করছে। তখন তাকে দ্রুত হাসপাতালের গাইনি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত গাইনী বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডা. কাউছার জাহানের তত্বাবধানে একটি ফুটফুটে কন্যা সস্তান প্রসব করে ওই নারী।
এদিকে খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন কোতয়ালী মডেল থানাধীন ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ আব্দুল্লাহ্ আল মামুন, এস আই আমিরুল। তারা তাৎক্ষনিক মানসিক ভারসাম্যহীন এই নারী ও তার মেয়ে বাচ্চাটির সকল খোজ খবর নেন। সমাজ সেবা দপ্তরে খবর দেন। সব ধরনের আইনী প্রক্রিয়ায় সহযোগীতা করেন। চিকিৎসা সেবা সঠিকভাবে যেন পায়, তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরর সাথে সাক্ষাতে আলোচনা করেন।
শুক্রবার সারাদিন বিশ্রামে থাকেন এই নারী। পরদিন শনিবার তার খবর নিতে হাসপাতালে চলে আসেন কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ, তিনি বলেন, খবর পেয়ে মা-মেয়ের জন্য উপহার সামগ্রী নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যাই। মা-মেয়ে সুস্থ আছে, আমরা সব ধরনের আইনি সহযোগীতা করছি, সমাজ সেবা দপ্তরের সাথে আলোচনা করে যে কোন সহযোগীতার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
ময়নামতি জেনারেল হাসপাতালের প্রসাশনিক কর্মকর্তা মো. আফজাল বারী বলেন, আমরা এই মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে প্রসব বেদনা ছটফট করতে দেখে জরুরী চিকিৎসার ব্যাবস্থা করি। গাইনী বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডা. কাউছার জাহান ম্যাডামের দক্ষ চিকিৎসায় নরমাল ডেলিভারি হয়। হাসপাতালের স্টাফরা আগ্রহের সাথে খুব যত্ন সহকারে ওই নারীর সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা সম্পূর্ন বিনা মূল্যে তার সকল চিকিৎসা দিয়ে যাব। চিকিৎসা শেষে শিশু ও মাকে মাকে উপজেলা সমাজ সেবা দপ্তরের কাছে হস্তান্তর করব।
Last Updated on February 19, 2023 8:09 pm by প্রতি সময়