বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা কুমিল্লার একটি নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারেও বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার কারণে কুমিল্লা নগরীতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একদিনের সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে সেই পানি কয়েকদিন জমে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টির ঘটনাও নতুন কিছু নয়। কুমিল্লা নগরীতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা অনেক আগ থেকেই দুর্বল।
নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দরা। খাল খনন এবং ড্রেন পরিষ্কার করার মতো কাজ চলমান থাকলেও, এবারে আষাঢ় মাসের শুরু থেকে যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, এর তীব্রতা বাড়লে জলাবদ্ধতার পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃষ্টি-বাদলার মৌসুম মানেই কুমিল্লায় জলাবদ্ধতা। বর্ষার মূল মৌসুম আসার আগেই বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে যে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে ডুবে যায় কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকা। বিশিষ্টজনরা তাই জোর দিয়েই বলছেন, জলাবদ্ধতা শুধু বর্ষা মৌসুমি নয়, এটি কুমিল্লার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জলাবদ্ধতা কুমিল্লার মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যা। সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর অলিগলি ও প্রধান সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও হাঁটু ও কোমর সমান পানিতে নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। অথচ পানিবদ্ধতা নিরসনে নানা প্রকল্প ও পদক্ষেপ নিয়ে আসে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। কিন্তু ফলাফল যেন শূন্যই থেকে যাচ্ছে। কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। ফলে এবারের বর্ষা মৌসুমেও সেই আশঙ্কায় আতঙ্কিত কুমিল্লা নগরবাসী।
জলাবদ্ধতার কারণে যেসব এলাকা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-টমছমব্রিজ থেকে কান্দিরপাড় সড়ক, জিলা স্কুল রোড, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সামনের সড়ক, রেইসকোর্স, বিসিক শিল্পনগরী, ছায়াবিতান, ঠাকুরপাড়া, অশোকতলা, ছাতিপট্টি, কান্দিরপাড় থেকে রাণীরবাজার সড়ক, শুভপুর, ঝাউতলা, মুরাদপুর, চর্থা, ইপিজেড এলাকা, ছোটরা। এই এলাকাগুলোতে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে যায়, যা জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি করে।
এদিকে নগরীর ধর্মপুরে ভিক্টোরিয়া কলেজের ডিগ্রি শাখা ও তৎসংলগ্ন আবাসিক এলাকাটি সামান্য বৃষ্টিতেই সেখানকার বাসিন্দাদের পানিবন্দি করে রাখে দিনের পর দিন। বিশেষ করে ধর্মপুরের ছায়াবিতান সোসাইটি ও আশপাশের বাসিন্দাদের বড় দু:খ হয়ে দাঁড়িয়েছে জলাবদ্ধতা। এই এলাকায় জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ হলো, পানি নিষ্কাশনের দুর্বল ব্যবস্থাপনা।
কয়েকদিন আগে নগরীর রাণীর বাজার এলাকা, ঠাকুরপাড়া, মদিনা মসজিদ রোড, অশোকতলা, বিসিক শিল্পনগরী, ধর্মপুর ডিগ্রি কলেজ ও খাদ্যগুদাম এলাকা সহ আশপাশের এলাকার ড্রেনের পানি অপসারণে যেসকল প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করে শুরু হওয়া বর্ষা মৌসুমে সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মামুন, কুমিল্লা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম ভূইয়া ও নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ওইসব এলাকা পরিদর্শন করেন।
এসময় কর্মকর্তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণ চিহ্নিত ও তা নিরসনে স্থানীয়দের আশস্থ করেন। পরে ওইসব এলাকায় সিটির পরিচ্ছন্নকর্মীরা কাজ করেন।
স্থানীয়রা জানান, এধরণের সাময়িক কাজে মানুষের ভোগান্তি পুরোপুরি শেষ হবে না। ড্রেনেজ ব্যবস্থার সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার বয়স ২০ বছর ছাড়িয়েছে। এখানকার পুরনো রাস্তাগলোর অবস্থা এমনিতেই খারাপ, বর্ষায় তা আরও খারাপ হয়ে ওঠে। এছাড়া, সামান্য বৃষ্টিতেই অনেক জায়গায় পানি জমে যায়, যা জনসাধারণের চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করে।
এরমধ্যে নগরীর ছায়াবিতান সোসাইটি ও আশপাশের এলাকার মানুষ বর্ষা-বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়। জলাবদ্ধতার কারণে এই এলাকায় বসবাসকারী দশ হাজারের বেশি বাসিন্দা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থী, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ডিগ্রি শাখার হাজার হাজার শিক্ষার্থীসহ পথচারিদের অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
ছায়াবিতান হাউজিং সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ছায়াবিতান ও ভিক্টোরিয়া কলেজের ডিগ্রি শাখায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র নালা (ড্রেন) দীর্ঘদিন পরিস্কার না করায় প্রতিবছরই এই সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে জনভোগান্তি নিরসন হবে না।
নগরীর বিশিষ্টজনরা জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে পুকুর, নদী ও খালগুলোকে প্রাকৃৃতিক নকশায় ফিরিয়ে আনতে হবে। একইসাথে পরিকল্পিতভাবে করতে হবে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। না হয়, প্রতিবছর সরকারি অর্থের অপচয় ঘটতেই থাকবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে খালের প্রসস্থতা বাড়িয়ে দিয়ে আর ডাকাতিয়া নদীর গভীরতা আরো একটু বাড়িয়ে ড্রেনেজ করতে হবে সেখানেও। কারণ শহরের নিচু এলাকার পানি যাতে জমে না থেকে ডাকাতিয়ায় পড়তে পারে সেইদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সায়েম ভুঁইয়া বলেন, খাল খননের জন্য ইতোমধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি এবং দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কিছুদিনের মধ্যেই আমরা সেটা চালু করবো। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে আমরা ড্রেনগুলো চালু করার জন্য কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। জুন মাসের শুরু থেকেই আমরা নগরীর যেসকল এলাকায় পানি জমে সেসব এলাকা ঘুরে দেখেছি এবং রেইসকোর্স খালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজও করা হয়েছে।
Last Updated on June 25, 2025 10:21 am by প্রতি সময়