বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো হেরিটেজ ট্যুর শুরু করেছেন ভ্রমণকন্যা ও লেখক এলিজা বিনতে এলাহী। বর্তমানে এই ভ্রমণকন্যা অবস্থান করছেন সৈয়দপুর জেলায়। আজ ১৩ জুন। সৈয়দপুরবাসীর কাছে এদিনটি বেদনাদায়ক। সৈয়দপুরের গোলাহাটে রয়েছে একটি বধ্যভূমি। আর এ বধ্যভূমির করুণ ইতিহাস রচিত হয়েছে পাকবাহিনীর হাতে গোলাহাটের ৩৩৭ নম্বর কালভার্টের কাছে ৪৪৮জন ট্রেনযাত্রীকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায়। এনিয়ে ভ্রমণকন্যা ও লেখক এলিজা বিনতে এলাহী তার ফেসবুক পেইজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। সাথে যুক্ত করেছেন কিছু ছবি। ‘প্রতিসময়’ এর বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগে এলিজা বিনতে এলাহীর লেখাটুকু প্রকাশ করা হলো।এ লেখায় তিনি প্রথম আলোর রিপোর্টার এমআর আলম ঝন্টু, নীলফামারীর ইতিহাসের লেখক জাহাঙ্গীর আলম সরকার এবং নীল ফামারী জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের লেখক হাফিজুর রহমান হাফিজের বই থেকে সহযোগিতা নিয়েছেন।
ঐতিহাসিক ৩৩৭ নম্বর কালভার্ট
।। এলিজা বিনতে এলাহী ।।
আজ ১৩ই জুন, গোটা সৈয়দপুর অঞ্চলের জন্য একটি বেদনার দিন, ১৯৭১ সালের এই দিনে সকাল ১০টায় হত্যা করা হয়েছিল ৪৪৮ জন ট্রেনযাত্রীকে যা ট্রেন গণহত্যা নামে পরিচিত।
সেই ট্রেন গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল গোলাহাটের ৩৩৭ নম্বর কালভার্টের কাছেই। ৩৩৭ নম্বর কালভার্টের নীচে ছিল রক্তের বন্যা আর লাশের স্তুপ। ট্রেনের ৪টি কম্পার্টমেন্ট এর সবাইকে হত্যা করা হয়।
সৈয়দপুরের গণহত্যা ছিল ভয়াবহ। বলতে গেলে এখানে প্রতিটা পাড়ায় গণকবর আছে।
ঘটনাটি ছিল এরকম!
কদিন ধরে সৈয়দপুর শহরে মাইকে একটি ঘোষণা দেওয়া হচ্ছিল। পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছিল ওই ঘোষণা। বলা হচ্ছিল, শহরে যেসব হিন্দু মাড়োয়ারি আটকা পড়ে আছেন, তাঁদের নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ জন্য একটা বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রেনটি সৈয়দপুর রেলস্টেশন থেকে ভারতের শিলিগুড়ির উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
কথা মত যাত্রী নিয়ে ট্রেন যাত্রা করে। হিন্দু মারোয়ারীদের আলাদা করে ৪টি কম্পার্টমেন্টে উঠানো হয়। কিছুক্ষন পর ট্রেনটি গোলাহাট নামক স্থানে এসে থেমে যায়। পাক সৈন্যরা ট্রেন কোচে ভেতরে গিয়ে হত্যা শুরু করে। কেউ কেউ জানালা দিয়ে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বেঁচে আছেন এখনো।
ওই হত্যাযজ্ঞে শিশু, বৃদ্ধ, নারীরাও রেহায় পাননি। বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়, ওই ট্রেন হত্যাযজ্ঞে ৪৪৮ জনকে একে একে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
৩৩৭ নম্বর কালভার্টের আশপাশের জায়গায় ছিল রক্ত আর লাশ। পরবর্তীতে গোলাহাটের যে স্থানে বধ্যভুমি স্মৃতি স্তম্ভ করা হয়েছে সেখানে পরে ছিল সর্বাধিক স্তুপাকৃত লাশ।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
Last Updated on June 13, 2021 7:55 pm by প্রতি সময়