আলোকিত জীবন মানে হেদায়েত প্রাপ্ত জীবন। সৃষ্টিকর্তার হেদায়েত ছাড়া মানবজীবন পুরোপুরি অন্ধকার।
পবিত্র কোরআনুল কারীমের সূরা রুমের ৪১নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে ‘মানুষেযর কৃতকর্মের জন্য স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে আল্লাহ তাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে অন্ধকার থেকে আলোর পথে। অর্থাৎ আল্লাহর রহমত অর্জনের পথে ফিরে আসার মধ্যে বান্দার সত্যিকারের সার্থকতা নিহিত।
সূরা নিসার ১৭নং আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকের তওবা কবুল করবেন যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে এবং সত্বর তওবা করে। কিন্তু যারা ভুল পথ থেকে সরে আসতে চায় না, যারা জাগতিক লোভ লালসার কাছে নিজেকে বিসর্জন দেয় তারা অভিশপ্ত।
সূরা নিসার ১৮ নং আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, তওবা তাদের জন্য নয় যারা আজীবন মন্দ কাজ করে। অবশেষে তাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হলে যে বলে আমি এখন তওবা করছি’ এবং তাদের জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফির অবস্থায়। এরাই তারা যাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তির ব্যবস্থা করেছি।’
পবিত্র কোরআনের উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, যারা মন্দ কাজে লিপ্ত এবং ভাবি মৃত্যুর আগে ক্ষমা চাইলেই মাফ পাওয়া যাবে। তারা আত্মপ্রতারণায় ভুগছে।এ ধরনের ভুল না করে সময় থাকতেই সবার শুধরে চলা উচিত। আল্লাহর কাছে সমর্পিত হয়ে জীবনের সব পাপ ও ভুল থেকে সরে এসে তার রহমত অর্জনের জন্য তওবা করা উচিত।
আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রয়োজনে বিভিন্ন বিষয়ের বিবরণ ও দিকনির্দেশনামূলক আয়াত নাযিল করেছেন।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেসব আয়াতের ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। যাতে মানুষ দ্বীনের সঠিক পথে পরিচালিত হয়ে আলোকিত জীবন গঠন করতে পারে ।
আবার এমন অনেক আয়াত নাযিল করেছেন, যা কোরআনুল কারীমের বিশেষ হেকমত। সেসব আয়াতের বিভ্রান্তিমূলক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। যারা তা করবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানুষ যাতে কোনভাবে দ্বীন থেকে বিচ্যুত না হয়, সে ব্যাপারে দোয়া ও সতর্কতা ঘোষণা করেছেন। মানুষের কল্যাণে যাবতীয় বিপদাপদ থেকে বেঁচে থেকে দ্বীনের ওপর অবিচল থাকার এবং ইসলামের কোনো বিষয়েই সন্দেহ পোষণ না করার সতর্কতা ঘোষণা করে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি যখন আমাদের হেদায়েত দান করেছ তখন আর আমাদের অন্তরকে বাঁকা করো না। আমাদের তোমার রহমত দান করো। নিশ্চয় তুমিই মহান দাতা।
হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় আপনি একদিন মানুষকে একত্রিত করবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ব্যতিক্রম করেন না।”( সুরা আল -ইমরান : আয়াত ৮-৯ )
উল্লেখিত দুই আয়াত এই ইসলাম ও দ্বীনের সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কথা বলা হয়েছে। মানুষ যাতে কোনোভাবেই ইসলাম ও দ্বীন থেকে বিচ্যুত না হয় সে ব্যাপারে নসিহত পেশ করা হয়েছে।আলোচ্য আয়াত দ্বারা এটি প্রমাণিত যে, হেদায়েত পাওয়া ও না পাওয়া আল্লাহর মর্জির ওপর নির্ভরশীল। তাই তার হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে তারই কাছে ধরনা দেয়ার উপদেশও তিনি দিয়েছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এমন কোন অন্তর নেই যা আল্লাহ তায়ালার নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। অতএব, আল্লাহ তায়ালার মহান দরবারে তার হেদায়েতের তাওফিক কামনা করে দোয়া করা কল্যাণকামী মানুষের একান্ত কর্তব্য।
এ কারণেই কোরআনের ভূমিকাতেই আল্লাহ তা’য়ালা মানুষকে এ কথা স্মরণ করার উপদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি বরং প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজে তা পড়াকে বিধান করে দিয়েছেন। আর সেখানে প্রতি রাকাতে মানুষ বলে থাকেন, ” হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের সরল-সঠিক পথ দেখান।
পবিত্র কোরআনের সূরা আরাফ-এর ১৭৭ আয়াতে বলা হয়েছে, “যে সম্প্রদায় আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করে, তাদের অবস্থা কত মন্দ।’ পরবর্তী আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,” আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন সে-ই কেবল হেদায়েত প্রাপ্ত হয়। আর আল্লাহ যাদের বিপথগামী করেন, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। প্রথম আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর অবাধ্য ও বিপথগামী বান্দাদের দুর্ভাগ্যের জন্য আফসোস ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয় আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, মানুষের ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক আসলে আল্লাহ। হেদায়েত পাওয়া এবং না পাওয়া ও প্রকৃত অর্থে আল্লাহর হাতেই। তবে এর মানে এই নয় যে আল্লাহ মানুষকে ভাল কাজ বা খারাপ কাজ করতে বাধ্য করবেন। সুপথগামী হওয়া বা বিপথগামী হওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা মানুষের আছে; কিন্তু সবকিছুই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। সুপথ পাওয়ার জন্য বা বিপথগামিতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা জরুরি। কেননা আল্লাহর অনুগ্রহ যার ওপর বর্ষিত হবে সে সুপথ লাভ করবে আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করবে না সে সুপথও খুঁজে পাবে না।
সুতরাং রহমত,বরকত ও নাজাতের এ ভরা মৌসুম মাহে রমজানে পাক সাফ তথা হেদায়েতের রশি ধরে আলোকিত জীবন গঠন অতি সহজ ও সম্ভব। আসুন, মাহে রমজানের এ সুবর্ণ সময়কে কাজে লাগিয়ে আলোকিত মানুষ হই। আল্লাহ আমাদের সকলকে মাহে রমজানের আলোকে আলোকিত মানুষ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক
Last Updated on April 15, 2022 9:37 pm by প্রতি সময়