ভাস্কর্য হচ্ছে মানুষের চিন্তাশক্তির সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ। এটি দেশের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির পরিচায়ক। যেখানে তুলে ধরা হয় হাজার বছরের ইতিহাস। ভাস্কর্যে ফুটে উঠে ইতিহাসের বীরত্বগাথা, মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধা আর নিজ সংস্কৃতির নানা দিক।
স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ এবং জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একসূতোয় গাঁথা একটি ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে ইসলামি দলগুলোর বাধা দেয়ার বিষয়ে রবিবার (২৯ নভেম্বর) দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম অফিসে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। এবিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘মূর্তি ও ভাস্কর্য কিন্তু এক নয়, আজকে পাকিস্তান যান, ভারতে যান। বিশ্বের যেকোনো রাষ্ট্রে যান না কেন- সব জায়গায় ভাস্কর্য আছে। ভাস্কর্যই যদি মূর্তি হয় তবে টাকার ভেতরে বঙ্গবন্ধুর ছবি আছে। এর আগে যারা ছিলেন তাদের ছবি ছিল। সেগুলো কীভাবে থাকল। সেগুলো সবাই পকেটে নিয়ে ঘোরে, কয়েনের মধ্যেও আছে। সারাবিশ্বে সব জায়গায় যান, কয়েনের ভেতরে সবকিছু আছে। আমি মিসরে গিয়েছি সেখানে দেখেছি, সৌদি আরবে যান সেখানেও আছে। সেটা যদি হয়, আজকে বাংলাদেশে যারা এটা নিয়ে আলোচনা করছে তাদের চিন্তা করতে হবে, মূর্তি ও ভাস্কর্য এক নয়। ’
দেশ বিদেশে তথা মুসলিম দেশগুলোতে ভাস্কর্য থাকার বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী যা বলেছেন, একথার যথার্থ বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায়। ওইসব মুসলিম দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে-সেখানে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলে ধরা হয়েছে নির্মিত ভাস্কর্যে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের ঐতিহ্য, কালচার এসবের ওপর ভিত্তি করে নানান ধরণের ভাস্কর্য তৈরি করে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে নিয়ে যায় দেশটির সৌন্দর্য, কৃষ্টি কালচার, মানুষে মানুষে বন্ধনের রেস, আরও কতকিছু!মুসলিম দেশগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। কট্টর মুসলিম প্রধান দেশ সৌদি আরব থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া, মিশর, ইরান, ইরাক, তুরস্ক, কাতার এরকম বহু দেশ আছে তারা তাদের সংস্কৃতিকে বহন করে চলেছে এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে।
সৌদি আরবকে ইসলামের পুণ্যময় ভূমি বলা হয়ে থাকে। ইসলাম ধর্মের পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনা এই দেশে অবস্থিত। শতভাগ মুসলিম দেশ সৌদি আরবের বাণিজ্যিক রাজধানী জেদ্দা নগরীতে আছে উটের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। রাজধানী জেদ্দার উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে নগরীতে মুষ্টিবদ্ধ হাত, হাংরি হর্স, মানব চোখ, মরুর বুকে উটের ভাস্কর্য।
সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্বের উন্নত দেশের কাতারে শামিল এখন। সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় অবস্থিত সাতটি স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি ফেডারেশন। এগুলো একসময় ট্রুসিয়াল স্টেটস নামে পরিচিত ছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হলো আরবীয় যুগলের মূর্তি। দুবাইয়ের সুউচ্চভবন বুর্জ আল খলিফার বিপরীতে এটির অবস্থান।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর একটি কাতার। মোট জনসংখ্যার ৭৭.৫ শতাংশ মুসলিম। কাতারেও দেখা যায় ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। কাতারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হলো ‘হারনেসিং দ্য ওয়ার্ল্ড’, মানে হচ্ছে বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ। কাতারের রাজধানী দোহায় কাতার সংস্কৃতি কেন্দ্রে কাতারা আম্পি থিয়েটারের সামনে স্থাপিত হয় পুরো পৃথিবীকে সংযোগ স্থাপন করা নারী প্রতিমূর্তির অবয়বের এই ভাস্কর্য।
তুরস্কের প্রথম প্রেসিডেন্ট মোস্তফা কামাল তুর্কি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নেতৃত্বে খেলাফত শাসনের অবসান ঘটিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ এক আধুনিক তুরস্কের যাত্রা শুরু হয়। তিনি আধুনিক তুরস্কের জনক। তুর্কি ভাষায় ‘আতা’ মানে জনক। ‘তুর্ক’ তো তুরস্ক। তাই তিনি আতাতুর্ক। স্বাভাবিকভাবেই তুরস্কজুড়ে রয়েছে কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য। এককালের সারা মুসলিম জাহানের খলিফার দেশ তুরস্ক সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও জনসংখ্যার বেশিরভাগই মুসলিম। সারা তুরস্কের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে প্রেসিডেন্ট কামাল আতাতুর্কের অগণিত ভাস্কর্য।
বর্তমানে জনসংখ্যার হিসাবে মুসলিম দেশের মধ্যে অবস্থান ১২-তে হলেও ইসলামের ইতিহাসের স্বর্ণযুগের প্রতিভূ ইরাক। জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশ মুসলিম। ইরাকের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। ৭ হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতির সন্ধান পাওয়া গেছে এই দেশে। প্রচুর ঐতিহাসিক ও দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যের মালিক দেশটি। আরব্য উপন্যাসের রহস্যে এখনো রহস্যময় বাগদাদ শহরের আবু নুয়াস স্ট্রিটে শাহেরজাদি পার্কে রয়েছে আরব্য উপন্যাসের প্রধান চরিত্র শাহেরজাদি এবং রাজা শাহরিয়ারের ভাস্কর্য।। বিশ্বজুড়ে আলীবাবার মর্জিনাকে চেনে না এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। এই বুদ্ধিমতী বাঁদী মর্জিনার বুদ্ধিতে কুপোকাৎ হয়েছিল ৪০ চোর। সেই মর্জিনার ভাস্কর্যের দেখা মিলবে বাগদাদে আলীবাবা স্কয়ারে আলীবাবা ফাউন্টেনে।
এমনিভাবে বিশ্বের আরও অনেক মুসলিম দেশে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ধারণ করে রাজা, মহারাজা, মনিষীদের ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। মুসলিমপ্রধান এসব দেশের কোনো নাগরিক ভাস্কর্য নিয়ে, নেতিবাচক কোন কথা বলেন না।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিন। এছাড়া protisomoy ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন ও বেলবাটন ক্লিক করে নতুন নতুন ভিডিও নিউজ পেতে অ্যাকটিভ থাকুন।
Last Updated on November 29, 2020 10:43 pm by প্রতি সময়