মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এমএলএম- নামের ভুঁইফোড় হায় হায় কোম্পানিগুলোর প্রতারণা-জালিয়াতি পর এবার অনলাইন প্রতারণার দরজা খুলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে মাত্র ছয় মাসে কুমিল্লা থেকে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় দশ কোটি টাকা। মুরাদনগর থানা পুলিশ গত শনিবার অভিযান চালিয়ে অনলাইন ভিত্তিক ‘মাই ন্যাশনাল আইটি ও এক্টিভ বাজার ২৪’ নামের হায় হায় কোম্পানীর প্রতারণা চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মুরাদনগর উপজেলা সদরের উত্তর পাড়ার শানু মোল্লার ছেলে মহসিন হায়দার (৪০) ও কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে আলাউদ্দিন (৩৫)। রবিবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে গ্রেফতারকৃত দুইজনকে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত মহসিন হায়দারের দাবি- এ পেশায় তারা সহযোগী মাত্র। জেলা পর্যায় রয়েছে তাদের বস রয়েছেন। যারা সবসময় থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
জানা গেছে,গত ছয় মাস ধরে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা সদরে চলছিল ‘মাই ন্যাশনাল আইটি ও এক্টিভ বাজার ২৪’ নামের হায় হায় কোম্পানির প্রতারণা। এই সময়ের মধ্যে চক্রের দুই সদস্য মহসিন হায়দার ও আলাউদ্দিন হাতিয়ে নেয় প্রায় দশ কোটি টাকা। প্রতারক চক্রের ওই দুই সদস্যের একজন মহসিন হায়দার মুরাদনগর উপজেলা সদরের ফায়ার সার্ভিসের পেছনে হুমায়ুন ভিলার ৩য় তলায় অফিস কক্ষ ভাড়া নেয়। সহয়োগী হিসেবে রাখা হয় আলাউদ্দিনকে। তারা অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান খুলে বায়ো ফ্লক মাছের প্রজেক্ট, ক্যাটারিং প্রজেক্ট, অনলাইন টিভি চ্যানেল, ন্যাশনাল আইটি সেক্টর, ন্যাশনাল ই-কমার্সসহ ঢাকা এবং গাজীপুরে ৩৬শ বিঘার উপর রিসোর্টের নামে শেয়ার বিক্রি করে।
মুরাদনগর উপজেলার নেয়ামতপুর গ্রামের আবদুল হকের ছেলে আবু বক্কর (২৩) জানান, মহসিন হায়দার তার কোম্পানীর একটি একাউন্ট আবু বক্কর কিং নামে খোলে দেয়। পরে সেই অনলাইন একাউন্টে ডলার দিয়ে তার কাছ থেকে নেয়া হয় ২ লাখ টাকা। প্রথম মাসে তাকে শেয়ারের লভাংশ দেয়া হয় দশ হাজার টাকা। পরের মাসেই মাত্র ২০ মাসে টাকা দ্বিগুণ হওয়ার লোভে সে এক সাথে ১৫ লাখ টাকা জমা দেয়।
এরই মধ্যে আবু বক্করের মতো উপজেলার নবীপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে সাগর মিয়া ও একই গ্রামের সামসুল হকের ছেলে কিবরিয়া, রহিমপুর গ্রামের মতিন সরকারের ছেলে সোহাগ মিয়া, নোয়াগাঁও গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে মাহবুব সরকার, নেয়ামতপুর গ্রামের মনিরুল হকের ছেলে মোবাশ্বির ভূইয়া, ভূবনঘর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে বেলাল হোসেন ও আবু হানিফ, গকুলনগর গ্রামের আলী আকবরের ছেলে জুনায়েদ, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার পুমকারা গ্রামের ফরিদ মিয়ার ছেলে আল আমিনের কাছ থেকে পর্যাক্রমে প্রায় ৬৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকাসহ প্রায় ৩শ সদস্যর কাছ থেকে বিশ্বাস অর্জন করে মহসিন ও আলাউদ্দিন হাতিয়ে নেয় প্রায় দশ কোটি টাকা।
মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাদেকুর রহমান জানান, ২০ মাসে টাকা দ্বিগুণ করার লোভ দেখিয়ে ‘মাই ন্যাশনাল আইটি ও এক্টিভ বাজার’ এর প্রাহকদের সাথে প্রতারণা করছিল। তাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। কয়েকজন প্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় দেড় মাস চেষ্টার পর শনিবার সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী আবু বক্কর বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
Last Updated on January 31, 2021 9:28 pm by প্রতি সময়