আমরা যারা নজরুল মেমোরিয়াল একাডেমীতে শিক্ষকতা করছি, করোনাকালীন এই সময়ে আমরা বছরের প্রথম মাস জানুয়ারি থেকেই আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি বিষয়ের উপর সাপ্তাহিক শীট তৈরি করছি। অভিভাবকগণ স্বাস্খ্যবিধি মেনেই প্রতি সপ্তাহের রবিবারে স্কুল থেকে সন্তানদের জন্য শীট নিচ্ছেন। শীটে আমরা পাঠ্যবই থেকে প্রথমে পৃষ্ঠা অনুযায়ী রিডিং পড়াই। রিড়িং পড়ানোর পর পঠিত পৃষ্ঠা থেকে আমরা শিক্ষকরা উত্তরসহ প্রশ্ন তৈরি করে দিচ্ছি। এতে তারা অধ্যায়টা রিডিং পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশ্ন সম্পর্কে অবগত হচ্ছে এবং অধ্যায়ভিত্তিক জ্ঞানলাভ করছে।
প্রতিটি গল্প,কবিতা ভালোভাবে রিডিং পড়ে অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্ন বুঝে নেওয়া: শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি গল্প,কবিতা ভালোভাবে রিডিং পড়তে হবে। গল্প,কবিতা রিডিং পড়লে এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়। কেবল না বুঝে গাইড থেকে প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করলেই হবে না। বুঝে পড়ে জ্ঞানলাভ করতে হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকগণ বাসায় শিক্ষকের ভূমিকা পালন করবেন।
বাসায় রুটিনমাফিক লেখাপড়া করা: ছাত্র-ছাত্রীদের অবশ্যই বাসায় রুটিনমাফিক পড়াশোনা করতে হবে। একদিন মন চাইলে বেশী করে পড়লাম, আবার দুই একদিন পড়ার সাথেই কোনো সম্পর্ক নাই এমন করলে হবে না। এতে পড়ার ছন্দপতন হবে। জীবন গড়ার সময় এখনই। এখন থেকেই জীবন গড়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। সম্মানিত অভিভাববৃন্দকে এ বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে।
সন্তানদের কোয়ালিটি সময় দেওয়া: আমাদের সন্তানরা এখন অনেকটা নিঃসঙ্গ সময় পার করছে। ঘর থেকে বাইরে বের হতে পারছে না, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সময় কাটাতে পারছে না। এতে তাদের মানসিক বিকাশ অনেকটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানাবো আপনার সন্তানের জন্য নিয়মিত রুটিনমাফিক কোয়ালিটি সময় দিন। এতে তাদের মানসিক বিকাশে অনেকটা সহযোগিতা হবে। করোনায় সুরক্ষা-নিরাপদ থাকার ব্যাপারে স্বাস্থ্যবিধির ওপর গুরুত্ব দেবেন। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, সন্তানকে মনোভাব শেয়ার করার অভ্যাস করাতে হবে। তাতে করে তার জড়তা কেটে যাবে।
হাতের লেখার প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া: সন্তানদের হাতের লেখার প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে হবে। এখন তারা স্বাভাবিক সময়ের মতো স্কুল করতে পারছে না। তাই লেখার চাপ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম। এখন দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী হাতের লেখার প্রতি তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, হাতের লেখাও এক প্রকার আর্ট। ধারাবাহিক অনুশীলন না করলে হাতের লেখা সুন্দর হবে না এবং পরীক্ষায় কাংখিত ফলাফল অর্জন করা যাবে না। প্রতিদিন পড়ার রুটিনে হাতের লেখার চর্চার একটা নির্দিষ্ট সময় অবশ্যই থাকতে হবে।
সবশেষে বলবো, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের দেশে চলমান। ইতিমধ্যে করোনার প্রকোপও বেড়ে গেছে। বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। এতে ভয় নয়, ঘরে ও ঘরের বাইরেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। সন্তান নিয়ে বাইরে বেরুলে যতোটা সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলবেন, মাস্ক তো অবশ্যই পরতে হবে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় এমন খাবার খাবেন। ঘরে সন্তানের সাথে হাসিখুশি থাকবেন। ওদের পড়ালেখার ব্যাপারে অভিভাবক হিসেবে আপনি দায়িত্বশীল হলে সন্তানরা এমনিতে পড়ালেখায় যত্নশীল হয়ে উঠবে। সবমিলে সংসারে হাসিখুশি থাকবেন। ইবাদত, উপাসনা করবেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করবেন।
Last Updated on March 23, 2021 1:22 pm by প্রতি সময়