-ভাতাপ্রাপ্ত এতিমদের টাকা খরচ হয় ভিন্নখাতে" />
এতিমখানার ভবন, কমিটি ও এতিমদের নামের তালিকা রয়েছে সমাজসেবা কার্যালয়ে। কিন্তু তালিকা আর বাস্তবে বিস্তর ফারাক। সরকারি খাতায় ২০ এতিম শিশুর নাম দেওয়া থাকলেও দৃশ্যমান রয়েছে চার শিশু। এদের সবারই পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন আছে। তবুও এরা এতিম! আবার জনবলের তালিকায় এতিমখানার প্রধান শিক্ষক, সহকারি শিক্ষক ও বাবুর্চিসহ চার পদে পরিচালনা কমিটির সভাপতির মেয়ে, ভাতিজা, নাতীকে দেখানো হলেও বাস্তবে ওরা বিভিন্ন কর্মস্থলে রয়েছেন। এমনিভাবে বছরের পর বছর এতিমখানার নামে সরকারি ও বেসরকারি অনুদানের অর্থ এবং সরকারি ভাতাপ্রাপ্ত এতিমের টাকা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে।
একটি সাইনবোর্ডসর্বস্ব দ্বিতল ভবনের দৃশ্যমান এতিমখানার আড়ালে এমন অদৃশ্য কারবার চলছে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের ওয়াহেদপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এতিমখানা কমপ্লেক্সে।
এ প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের কমতি নেই। এতিমখানা কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাজী মো. শাহআলমের বিরুদ্ধে ওয়াহেদপুর গ্রামের মো. আদুল জলিল নামে এক ব্যক্তি সমাজসেবা কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি সভাপতির বিরুদ্ধে মাদরাসার নিয়োগ বানিজ্য, মাদরাসার উন্নয়ন কাজে আসা অর্থ ও এতিম খানার নামে চাঁদা তুলে বিভিন্ন বিল ভাউচারে অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে আত্মসাতের কথা তুলে ধরেন।
এবিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, এতিম খানার সভাপতি কাজী শাহ আলম অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্চাচারীতা, অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে স্থানীয়দের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার আগে থেকেই আমি এতিমখানাটি পরিদর্শন করেছি। এ পর্যন্ত তিন বার গিয়েছি। সাইন বোর্ড থাকলেও এতিম এবং এতিমদের থাকার ঘর ও জনবল দেখতে পাইনি। সভাপতিকে চিঠি দিয়েও পরিদর্শনকালে তাকে উপস্থিত পাইনি। প্রতিবারই যেয়ে এতিমখানা বন্ধ পেয়েছি। আমি নতুন এসেছি। এতিমখানাটি ভুয়া মনে হচ্ছে। গত বছরের জুন মাসের অডিটের পর দলিলসহ সমস্ত কাগজপত্র জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে জমা থাকলেও তা যাচাইবাছাই করে দেখতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়াহেদপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা ও কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এতিমখানা কমপ্লেক্সে কোনো এতিম নেই। সরকারি খাতায় ২০ জনের নাম থাকলেও বাস্তবে রয়েছে মাত্র চার জন শিশু। এই চার জনের মধ্যে তিন এতিমের বাবা প্রবাসে এবং এক এতিমের বাবা চট্রগামে থাকেন। এদের সবারই পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন রয়েছে।
এদিকে সমাজসেবা অফিস থেকে প্রতি বছরে তিন জন এতিমের নামে ৭২ হাজার টাকা করে সরকারি ক্যাপিটেশন গ্রান্ট উত্তোলন করছে এতিমখানা কর্তৃপক্ষ। সরকারি ভাতাপ্রাপ্ত এতিমরা হলেন- ওয়াহেদপুর গ্রামের আদিল ইসলাম, সৈকত হোসেন, হাসিবুল ইসলাম। তবে এই তিন এতিমেরও কারোর দেখা মিলেনি এতিম খানা ও মাদরাসায়। তবে ওরা কেউ মাদরাসা বা এতিমখানার মক্তবে পড়তে আসেনা।
এবিষয়ে মাদরাসা ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাজী মো. শাহ আলম দাবি করেন, তার পেছনে শত্রু লেগে আছে। এতিমখানা তার নিজস্ব ভবনেই হয়েছে। সমাজসেবা দপ্তরে এতিম খানার জনবলে নিজের মেয়ে, ভাতিজা, নাতীকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি ফর্মালেটিস। না হয় নিয়োগকৃত শিক্ষক কর্মচারিদের বেতন আসবে কোত্থেকে ? সরকারতো বেতন দেয়না। সমাজ সেবা থেকে তিন জন এতিমের জন্য জন প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা করে বছরে ৭২ হাজার টাকা আসে। এ টাকা মাদরাসার নিয়োগপ্রাপ্ত নৈশ প্রহরী ওসমান গনিকে মসজিদের মক্তব ও এতিম শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে বেতন দেই।
Last Updated on March 16, 2023 6:50 pm by প্রতি সময়