কুমিল্লার দেবিদ্বারে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির জেরে সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা হয়েছে। এতে ২০১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতারের পর কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। অপরদিকে ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবার দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতারের পর কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে
দেবিদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাজী বাহালুল হক, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে এলেও উপস্থিত হয়নি কোনো শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও মাশিকাড়া গ্রাম ঘুরে কোনো পুরুষের দেখা পাওয়া যায়নি। আতঙ্কে ঘর থেকে বের হয়নি শিক্ষার্থীরা।
মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাজী বাহালুল হক বলেন, গ্রামে এখন তেমন কোনো পুরুষ মানুষ নেই। ঘটনার পর এলাকা থমথমে। স্কুলে আসেনি শিক্ষার্থীরা।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল মান্নান বলেন, ঘটনার পর দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকতল হোসেনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর বাবা। এ মামলায় প্রধান শিক্ষককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর মামলার বাদী পুলিশ। এতে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় এরই মধ্যে ১০ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১৫ মার্চ) মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকতল হোসেন তার কক্ষে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনাটি জানাজানির পর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী দিনব্যাপী ওই শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে। পরে প্রধান শিক্ষক ও তার মেয়ের জামাইয়ের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। পরে প্রধান শিক্ষককে রক্ষায় বহিরাগত লোকজন এসে ছাত্রদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী আহত হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
একপর্যায়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিদ্যালয়টির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীরা বিদ্যালয়ে ভাংচুর ও ইটপাটকেল ছুঁড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন। এর মধ্যে গুরুতর আহত কয়েকজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওই দিন রাতেই কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বিপুলসংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অবরুদ্ধদের উদ্ধার করেন। এ সময় রাত ১০টা পর্যন্ত এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
Last Updated on March 16, 2023 11:12 pm by প্রতি সময়