কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ভারত, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিক ও প্রতিনিধিগণ।
শনিবার সকাল পৌনে এগারটায় কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রির হলিক্রস পাদদেশে এ শ্রদ্ধা জানান তারা।
এর আগে আয়োজিত প্রার্থনা ও শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানে উপস্থিত কূটনীতিক ও সামরিক নেতৃবৃন্দকে অভিবাদন জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের হাইকমিশনার পিটার হাস্, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, জাপান হাইকমিশনার ইয়োমা কিমিনরি ও অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার নারদিয়া সেম্পসন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে কূটনীতিকরা বলেন, মানব সভ্যতার ইতিাসে সর্বহৎ ও নৃশংসতম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সামরিক ও বেসামরিক লাখো লাখো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্ব শান্তির জন্য ওই যুদ্ধে যারা জীবন উৎসর্গ করেছে তাদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। বিশ্বযুদ্ধের শতবর্ষ আমাদের সামনে এগিয়ে আসছে। তাই আমাদেরও সব বাধা পেরিয়ে সামনে এগুতে হবে। আশা ভালোবাসা সাহসিকতা দিয়ে আমাদের পথ চলতে হবে। এই চলার গন্তব্য যেন হয় সুখময় সুন্দর। আমাদের মাঝে মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে।বিশ্বব্যাপি শান্তি ও মানবতার পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা যতো মানবিক হবো, ততো বেশি আলোকিত হবো। তবেই আমরা অন্ধকার অতিক্রম করতে পারবো।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নিযুক্ত ভারতের প্রতিরক্ষা প্রতিনিধি বিগ্রেডিয়ার এম এস সাবারওয়াল, পাকিস্তানের প্রতিনিধি সাইয়েদ আহমেদ মারুফসহ ব্রিটিশ কাউন্সিল ও বিভিন্ন দেশের মোট ৬৮ জন অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত কমনওয়েলথভূক্ত দেশের হাইকমিশনারগণ প্রতিবছর ১১ নভেম্বর কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রিতে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হোন। শনিবার সকালে এদিনটিকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার, প্রতিনিধি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সমবেত হন।
এদিন সকালে সমাধিস্থলের পশ্চিমে হলিক্রস সীমানায় নিহত সৈনিকদের স্মরণে প্রথমেই পবিত্র কোরআন তেলোয়াতের মধ্যদিয়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা লুৎফুর রহমান। তারপর পবিত্র বাইবেল পাঠের পর চট্টগ্রাম বেথলেহেম চার্চের যাজক ড. আলফ্রেড অধিকারী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর আগে প্রার্থনা প্রার্থনা পর্ব শুরু হয়। এসময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। নিবর নিস্তব্দ হয়ে ওঠে পুরো সমাধিক্ষেত্র। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন শেষে শুরু হয় নিহত সৈনিকদের স্মরণে হলিক্রস পাদদেশে ফুলেল শ্রদ্ধা অর্পন পর্ব।
প্রথমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কুমিল্লা এরিয়া কমান্ডারের পক্ষে ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সাতটি দেশের হাইকমিশনার ও ডেপুটি হাইকমিশনারগণ হলিক্রসে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। প্রার্থনা অনুষ্ঠান শেষে হাইকমিশনার, প্রতিনিধি ও তাদের সঙ্গে আসা স্বজনরা ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রিতে শায়িত যোদ্ধাদের সমাধি ঘুরে দেখেন।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে নয়নাভিরাম জায়গা জুড়ে অবস্থিত ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রি বা কমনওয়েলথ রণসমাধি ক্ষেত্র। এখানে ১৩ দেশের ৭৩৭জন যোদ্ধার মধ্যে ব্রিটেনের ৩৫০জন, কানাডার ১২জন, নিউজিল্যান্ডের ৪জন, দক্ষিণ আফ্রিকার ১জন, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬জন, ভারতের ১৭২জন, বার্মার ১জন, দক্ষিণ রোডেশিয়ার ৩জন, বেলজিয়ামের ১জন, পোল্যান্ডের ১জন, জাপানের ২৪জন এবং বেসামরিক ১জনকে সমাহিত করা হয়। ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে চিরনিদ্রায় শায়িত সৈনিকদের মধ্যে মুসলিম ধর্মের ১৭২জন, বৌদ্ধ ধর্মের ২৪জন, হিন্দু ধর্মের ২জন এবং বাকিরা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। লন্ডন ভিত্তিক কমনওয়েলথ গ্রেভস কমিশন নামে একটি সংস্থা ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রির সার্বিক তদারকির দায়িত্বে রয়েছে।
Last Updated on November 11, 2023 6:18 pm by প্রতি সময়