সিদলের কথা শুনলে জিভে পানি আসে না-এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু কালের বিবর্তনে রসনাতৃপ্তির মুখরোচক এ খাবার আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। পারিবারিক ঐতিহ্যের পথ ধরে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরাবাজার থানার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কিছু পরিবার জীবনযাত্রার এই কঠিন সময়ে সিদল প্রক্রিয়াজাত ও বিক্রির বাপ-দাদার এ পেশা দিন দিন বিলুপ্তির পথে চলে যাওয়া সত্ত্বেও কোনরকমে ধরে রেখেছেন।
ভোজন রসিক বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাদ্য তালিকার এক অনন্য মুখরোচক খাবার সিদল। বাংলার সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের সিদল কুমিল্লার বেশ কিছু অঞ্চলের মানুষের জনপ্রিয় খাবার। দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের আকাল, প্রক্রিয়াজাত খরচ বদ্ধি ও দাম বৃদ্ধির কারণে এবং হরেক রকম বাহারি খাবারের ভিড়ে গ্রামীণ জীবনের খাবার তালিকা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সিদল।
মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর গ্রামের যেসব পরিবার এখনো সিদল ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে যে পরিমান মাছ পুকুর, খালে বিলে পাওয়া যেত তা সংগ্রহের পর সিদল শুঁটকি তৈরিতে খরচ কম হতো। ফলে শুঁটকির দাম ছিল কম, চাহিদা ছিল বেশি। এখন আর গ্রামগঞ্জের পুকুর খালবিলে সেই পরিমাণ ছোট মাছ মিলে না। অন্য উপজেলা বা জেলা থেকে মাছ সংগ্রহে এবং সেই মাছ প্রক্রিয়াজাতকরনে খরচও বেড়েছে কয়েকগুন। ফলে বিক্রিত দাম বেড়ে যাওয়ায় চাহিদাও কমে গেছে।
সিদল ব্যবসায়ী বিমল বলেন, এখন আর আগের মতো ছোট মাছ পাওয়া যায় না। তারপরও ব্যবসা ধরে রাখতে সিলেট সদর, ভৈরব, ফরিদপুর ও পাবনা থেকে রোদে শুকানো পুঁটি এবং পুঁটি মাছের পেটির তেল কিনে আনতে হয়। তারপর নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে শুকনো মাছে পরিমানমতো পানি মিশিয়ে ও হাঁড়িতে মাছের পেটের তেল মেখে মাছগুলো হাঁড়িতে রাখা হয়। দুই মাস পর পাওয়া যায় শিদল। পৌষ ও মাঘ মাসে তৈরি হয় সিদল। ফালগুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এ সিদল বিক্রি শুরু হয়। আগে প্রতি কেজি সিদল তৈরি করতে খরচ হতো ৫০ থেকে ৬০টাকা। আর এখন এই সিদলই তৈরিতে খরচ হচ্ছে প্রতি কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা। ফলে বিক্রি দাম বেড়েছে। তাতে চাহিদাও অনেকটা কমেছে।
অনেকটা আক্ষেপ করেই বিমল জানান, বাপদাদার পেশা, কোনরকমে ধরে রেখেছি। কিন্তু বংশপরম্পরায় আমাদের সন্তানেরা বর্তমানে এ পেশায় আসতে চাইছে না। তারা লেখাপড়া করে অন্যপেশায় যেতে চায়। এরিমধ্যে সিদল পেশার সঙ্গে জড়িত অনেকেই অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। তবে বাঙালি সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের সিদল পেশার লোকজনকে টিকেয়ে রাখতে হলে সহজশর্তের ঋণের পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
Last Updated on December 12, 2023 8:27 pm by প্রতি সময়