নাম তার মো. জুয়েল। কুমিল্লার সীমান্ত এলাকায় বাড়ি হলেও এই যুবক বসবাস করেন শহরে। কুমিল্লা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের একটি টিমে ভাড়ায়চালিত মাইক্রোবাসের দৈনন্দিন বেতনে চালকের দায়িত্ব পালন করেন। ডিবি পুলিশ টিমের গাড়ি চালক জুয়েল ইতিমধ্যে অভিধা পেয়েছেন ‘ডিবি জুয়েল’ নামে। মূলত সীমান্তের মাদক ব্যবসায়ি ও চোরাকারবারিরা তাকে ‘ডিবি জুয়েল’ নামে চেনেন।
সামান্য বেতনে গাড়ি চালক থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে বিলাসবহুল বাড়ি. গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পেছনে মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জুয়েলের বিরুদ্ধে চারটি মাদক ও চোরাচালান মামলা চলমান রয়েছে।
ডিবি পুলিশ টিমের গাড়ি চালক হলেও সে সোর্স হিসেবে নিজের পরিচয় বহন করে। সেই সূত্রে মাদক ও চোরাকারবারিদের কাছে সে ‘ডিবি জুয়েল’ নামে অত্যধিক পরিচিত। জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি টিমের ভাড়ায় চালিত গাড়ির চালক হয়ে ‘ডিবি জুয়েল’র মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলার বিশিষ্টজনরা।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, জুয়েলের বিরুদ্ধে ডিবির সোর্স পরিচয়ে চোরাকারবারি এবং মাদক ব্যবসায়িদের কাছ থেকে বখরা আদায়, সীমান্ত এলাকায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও তার সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে লোকজনকে গ্রেফতারভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। মাদক সংশ্লিষ্টতায় জুয়েলের নেটওয়ার্ক কুমিল্লা ছাড়িয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ফেনি পর্যন্ত ঠেকেছে। এসব জেলায় জুয়েলের মাদকের চালান আটক হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সীমান্ত এলাকার গরিব ঘরের ছেলেদের ভয় ও প্রলোভন দেখিয়ে মাদক পরিবহনে যুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গাড়ি চালকের অন্তরালে মাদক বাণিজ্যে গত পাঁচ বছরে জুয়েল নগরীর ছোটরায় আলিশান বাড়ি, ডেইরি ফার্ম, বেশ কটি গাড়ির মালিক বনেছেন। তার বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানা সহ অন্যান্য থানায় মাদক ও চোরাকারবারির চারটি মামলা চলমান রয়েছে। অব্যাহতি পেয়েছেন এধরণের আরও ৫/৬টি মামলা থেকে।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শাহ মো. আলমগীর খান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছেন জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। অথচ জেলা পুলিশের একটি শক্তিশালী সংস্থা গোয়েন্দা শাখার আভিযানিক টিমের ভাড়ায় চালিত গাড়ির একজন চালক যদি মাদক সংশ্লিষ্টতায় জড়িয়ে মামলার আসামি পর্যন্ত হয়, সেক্ষেত্রে এধরণের লোকদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে।
এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কুমিল্লা ডিবি পুলিশের কথিত সোর্স জুয়েল বলেন, ‘আমি ডিবি পুলিশের একটি টিমের গাড়ি চালাই। এছাড়া আমি একজন খামার ব্যবসায়য়ি, আমার নিজের ডেইরী ফার্ম আছে। গাড়ির ব্যবসা করি, ডিবিতেও আমার গাড়ি দিয়ে রেখেছি। আমি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। বরং মাদক ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে পুলিশকে বিভিন্ন সময় তথ্য দেই। এতে ক্ষুব্দ হয়ে মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। আমার নামে মাদক মামলাগুলো ষড়যন্ত্রমূলক। বর্তমানে আমার নামে কোন ওয়ারেন্ট নেই।’
কুমিল্লা ডিবি ওসি রাজেশ বড়ুয়া বলেন, জুয়েল নামের কাউকে আমি চিনি না। এ ধরনের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Last Updated on February 12, 2024 11:14 pm by প্রতি সময়