“ড্রেজার ব্যবসায়ি সোহেল খান বললেন উপজেলা ভূমি অফিস, থানা পুলিশ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও কতিপয় সাংবাদিক ম্যানেজ করেই ড্রেজার চলে”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বললেন “এ উপজেলার কিছু মানুষের ড্রেজারপ্রীতি রয়েছে”
——————
কুমিল্লার মুরাদনগরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। এতে বিলীন হচ্ছে উপজেলার তিন ফসলি কৃষি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকগণ ড্রেজার ব্যবসায়ি চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামের কোন না কোন স্থানে অবৈধ ড্রেজার মেশিন চালাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিখেকো চক্র। অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারনে ৫০/৬০ ফুট গভীর থেকে মাটি ও বালি উত্তোলনের ফলে আশ-পাশের তিন ফসলের জমিগুলো কূপে পরিনত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমান ২৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর। এর মধ্যে বেশীর ভাগই দুই থেকে তিন ফসলী জমি। অথচ পুকুর ও ডোবা করার কারণে মাঠের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত অনাবাদি রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবেল খান পাপ্পু বলেন, ড্রেজার ও ভেকু দিয়ে মাটি কাটার অবস্থা দেখে আমি উদ্ধিগ্ন ও আতংকিত। কেননা তিন ফসলি জমির টপসয়েল্ট (উর্বর মাটির উপরের অংশ) ব্যাপক হারে কেটে নেওয়া হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে চাষাবাদের জন্য জমি পাওয়া যাবে না। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কৃষি জমির মাটি কেটে অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
উপজেলার মুগসাইর গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে ড্রেজার ব্যবসায়ি সোহেল খান বলেন, ‘আমরা উপজেলা ভূমি অফিস, থানা পুলিশ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও কতিপয় সাংবাদিক ম্যানেজ করেই ড্রেজার চালাই।’
ধামঘর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার বলেন, আমরা সবসময় ড্রেজারের বিপক্ষে। ড্রেজার ব্যবসায়িদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রমান করতে পারলে চাকুরি ছেড়ে দেব।
মুরাদনগর থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর বলেন, ড্রেজার ব্যবসায়িদের কাছ থেকে পুলিশের টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু করা হয়েছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসরিন সুলতানা নিপা বলেন, ড্রেজারের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। নির্বাচনের এ সময়েও অবৈধ ড্রেজার বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভূমি অফিসের নামে কেউ ড্রেজার ব্যবসায়িদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রমান পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সামাদ শিকদার বলেন, ‘আমি যোগদানের পর বুঝতে পেরেছি এ উপজেলার কিছু মানুষের ড্রেজারপ্রীতি রয়েছে। ড্রেজারমুক্ত করার জন্য নিয়মিত অভিযান চলছে। ড্রেজার ব্যবসায়িদের দৌড় শুরু হয়ে গেছে।’
Last Updated on December 28, 2023 9:06 pm by প্রতি সময়