সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় ইতালি প্রবাসী এক নারীর ইন্দনে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন ও ছাত্রীর বাবা-মা। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করায় ওই ইতালি প্রবাসীর হয়ে স্থানীয় এক নারী ইউপি সদস্যের হুমকিতে এক সপ্তাহ ধরে ঘর ছাড়া ওই ছাত্রীর পরিবার।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ১৪নং লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের অপহরণের শিকার ওই ছাত্রীর বাবা-মা স্থানীয় একটি কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে অপহৃত ছাত্রীর বাবা নিখিল চন্দ্র দাস জানান, “আমার ১২ বছর বয়সী মেয়ে ধুলিয়ামুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ওই গ্রামের দীপালী রানী দাস একজন ইতালি প্রবাসী। তিনি কুমিল্লা শহরে থাকেন। তার বাসায় কাজ করেন রুনু নামের এক নারী। ওই নারীর ছেলে অন্তরের কাছে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য দিপালী রানী আমার কাছে প্রস্তাব পাঠায়। আমি দিপালী রানীকে জানাই মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি, সে নাবালিকা, এখন বিয়ে দেব না। এতে তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হন।’
সংবাদ সম্মেলনে নিখিল চন্দ্র দাস আরো জানান, ‘গত ২২ এপ্রিল দীপালী রানী বরুড়ায় তার গ্রামের বাড়িতে অন্তর নামের ওই ছেলেকে নিয়ে আসেন এবং কৌশলে আমার মেয়েকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে আমার মেয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে ঘরে আটকে রাখে। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ ডেকে এনে তিনি আমাকেও ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। আমার মেয়েকে স্ট্যাম্পে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেবে এমন কথা বলে আমাকে বরুড়া বাজারে স্ট্যাম্প আনতে পাঠান। আমি ফিরে এসে দেখি ওই ঘরে আমার মেয়ে নেই। দিপালী রানী এবং ওই ছেলে মিলে আমার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে নিখিল চন্দ্র দাস বলেন,’আমি নিরুপায় হয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেমকে জানালে তিনি সহায়তায় এগিয়ে আসেননি। পরে বরুড়া থানায় মেয়ে অপহরণের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করতে গেলে থানার ওসি বলেন দিপালী রানীর নাম ছাড়া অজ্ঞাত নামে অভিযোগ করার জন্য। আমি ওসিকে পরে আসবো বলে চলে আসি।’
নিখিল চন্দ্র জানান, পরে তিনি গত ২৪ এপ্রিল নিজে বাদী হয়ে কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে নিখিল চন্দ্র অভিযোগ করে বলেন, আদালতে দিপালী রাণীর নামে মামলা করায় লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের ইউপি সদস্য শাহিনূর আক্তার তাকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন। তার হুমকিতে তিনি প্রায় সাত দিন ধরে স্ত্রীসহ ঘরছাড়া।
কুমিল্লার পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, মামলাটির তদন্তের কাজ চলছে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব ভিকটিম শিশুটিকে উদ্ধার করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনবো।
মামলা না নেওয়ার বিষয়ে বরুড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারটি থানায় এসেছিল। আমরা বলেছি অজ্ঞাত আসামি দেওয়ার জন্য। তারা বলেছিল বুঝেশুনে আবার আসবে। কিন্তু পরে আর আসেনি।
এ বিষয়ে জানতে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম, সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য শাহিনূর আক্তারকে ফোন করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Last Updated on April 27, 2024 7:28 pm by প্রতি সময়