গত ১০ দিনে জেলার ব্রাহ্মণপাড়া, চৌদ্দগ্রাম ও বরুড়া উপজেলায় পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে দশ শিশু। তাদের বেশির ভাগই বেড়াতে গিয়ে অভিভাবকের চোখ ফাঁকি দিয়ে খেলতে গিয়ে পানিতে পরে যায়। পরে নিখোঁজ হলে তাদেরকে পুকুর বা ডোবা থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
কুমিল্লার ওইসব উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ৮ আগষ্ট দুপুরে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মহালক্ষীপাড়া গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে মোরশেদ আলমের লামিয়া আক্তার নামের দেড়বছর বয়সী কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়।একই দিন দুপুর ২টার দিকে কুমিল্লার বরুড়ায় পানিতে ডুবে প্রিয়া দাস নামে ৭ বছর বয়সি এক শিশু মারা যায়। ৫ আগষ্ট ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় শশীদল ইউনিয়নের নাগাইশ গ্রামে নানার বাড়িতে বেড়াতে এসে ফাইজান নামে ১১ বয়সী এক শিশু প্রাণ হারায়। ২ আগষ্ট বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নে পানিতে ডুবে প্রাণ হারায় ৪ বছর বয়সী ইসমাইল এবং ৬ বছর বয়সী রোজা। তারা দু’জনে মামাতো-ফুপাতো ভাই-বোন। ২৮ জুলাই চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের সোনাপুর দক্ষিণ পাড়া গ্রামে পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে দুই শিশু। তারা হচ্ছে সোনাপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে আবদুর রহমান ফাওয়ায়েজ (৮) ও একই বাড়ির জালালের ছেলে ফাহমিদ (৮)। বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে নেমে তাদের মৃত্যু হয়। একই দিন বিকেলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের মঞ্জুরি খালে ডুবে তানভীর নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। ২৯ জুলাই ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা ইউনিয়নে তাইয়েবা নামে এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।
কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচাল আখতারুজ্জামান জানান, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু ঠেকাতে সচতেনতার কোন বিকল্প নেই। কোথাও বেড়াতে গেলে বাবা- মাকে খুব বেশি সচেতন থাকতে হবে। যেন শিশুরা একা একা খেলতে গিয়ে দৃষ্টির বাইরে চলে না যায়। যেহেতু এই সময়ে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার বাড়ছে। আমরা নিয়মিত সচেতনতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শনিবার থেকে প্রতি উপজেলায় সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছি।
পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বজন ও অভিভাবকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কুমিল্লার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইকবাল আনোয়ার। তিনি বলেন, শিশুর অভিভাবক ও স্বজনদের সতর্ক থাকবে হবে এবং তাদের দিকে নজর রাখতে হবে। শিশুদেরকে পুকুর ডোবা কিংবা জলাশয়ের পাশে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখতে হবে এবং পুকুরে গোসল করতে যাওয়ার সময় অভিভাবকদের পাশে থাকতে হবে।
ডা. ইকবাল আনোয়ার আরে বলেন, এক্ষেত্রে শিশুদের দিনের বেলায় তত্ত্বাবধানে রাখতে ডে কেয়ার স্থাপন, জলাশয়ের আশেপাশে বেড়া দেয়ার পাশাপাশি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, স্কুল থেকে শুরু করে কমিউনিটি পর্যায় সাতার শেখা বাধ্যতামূলক করা, কুসংস্কার এড়িয়ে চলা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কেউ ডুবলেও তাকে উদ্ধারের পরপর তার শ্বাস ও হার্ট চালু করার যেসব প্রাথমিক উদ্যোগ আছে সেগুলো মানুষকে শেখানো।তাই যারা উদ্ধার করেন তাদের যদি প্রাথমিক ওই জ্ঞান থাকে তাহলে অনেক শিশুই বেঁচে যাবে।