অবশেষে মোটরচালিত রিকশা থেকে ব্যাটারি অপসারণের অভিযান শুরু করেছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। কুমিল্লা নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে অভিযান পরিচালনা করেছে প্রশাসন।সেই সঙ্গে এই বাহনটিকে কুমিল্লা নগরীতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে যাত্রী পরিবহনে প্যাডেলচালিত রিকশা চলবে নির্ধারিত ভাড়ায়। একদিকে দ্রুতগতিতে চলাচলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও নগরীতে যানজট সৃষ্টির জন্য যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল মোটরচালিত রিকশা।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) নগরীর সার্কিট হাউজ মোড়, কান্দিরপাড় ও পুলিশ লাইনস এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ। এই অভিানে জেলা প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা করছে জেলা ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
নগরীতে চলাচলকারি মোটরচালিত রিকশা আটক করে ওই রিকশার বডি থেকে ব্যাটারি, মোটর অপসারণসহ ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল পার্টসের সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান শুরু হয়েছে। ব্যাটারি ও মোটর অপসারণ কাজ শেষে প্যাডেলে চালানোর পরামর্শ দিয়ে চালককে রিকশা ফেরত দেয়া হচ্ছে।এ অভিযান শুরু হওয়ায় ব্যাটারি অপসারণের ভয়ে চালকরা নগরীর রাস্তায় রিকশা নিয়ে নামছে না। ফলে ব্যাটারিচালিত রিকশাশূন্য হয়ে পড়ে নগরীর রাস্তাঘাট। ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চলায় সোমবার নগরীর প্রধান সড়কগুলো ছিল অনেকটা ফাঁকা।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ অভিযান প্রসঙ্গে বলেন, ‘নগরীতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সব গণপরিবহনের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কুমিল্লা নগরীতে যানজট নিরসনে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। এই কার্যক্রমে জেলা প্রশাসনকে জেলা ট্রাফিক পুলিশ এবং সিটি করপোরেশন সার্বিক সহযোগিতা করছেন। নিষিদ্ধ এই যানবাহন চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ রাখতে জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা নগরী ও আশপাশের এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার সাধারণ রিকশার বডিতে চারটি করে ব্যাটারি স্থাপন করে মোটরের সাহায্যে চলাচল করতো এসব রিকশা। সাধারণ রিকশার চেয়ে একটু ভিন্ন কাঠামোতে এটি তৈরি হয়ে থাকে মোটরচালিত রিকশা। এটিতে বাঁশ কাঠের ব্যবহার থাকলেও বডিতে স্থাপন করা হতো ১২ ভোল্ট মানের চারিটি ব্যাটরি। আর বডির নিচে বসানো হয় মোটর। সয়ংক্রিয়ভাবে চালানোর জন্য ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল পার্টসও ব্যবহার করা হয়। ঘন্টায় গতিবেগ ২৫ থেকে ৩০কিলোমিটার।
এই রিকশা তৈরিতে খরচ পড়ে ৪০থেকে ৫৫হাজার টাকা। বেশ কয়েক বছর আগ থেকেই নগরীর কাশারিপট্রি, চকবাজার, পদুয়ার বাজার, ঢুলিপাড়া, ধর্মপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এটি তৈরির কারখানা গড়ে উঠে। ধীরে ধীরে এটি যাত্রী চাহিদা পাওয়ায় প্যাডেলচালিত সাধারণ রিকশার মালিকরাও আগ্রহী হয়ে উঠেন তাদের রিকশা ব্যাটারিতে চালানোর উপযোগী করে তুলতে। ব্যাস, সময়ের আবর্তে প্রায় ৮০ভাগ প্যাডেলচালিত রিকশাও মোটর ও ব্যাটারি নির্ভর হয়ে উঠে। আবার এসব ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাপক ব্যবহার ঘিরে নগরীতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বৈদ্যুতিক চার্জার স্টেশন।
Last Updated on February 15, 2021 9:24 pm by প্রতি সময়